‘শত বছরেও সচল গাড়ি’

হেলথ নিউজ | ২০ আগস্ট ২০১৮, ১৫:০৮ | আপডেটেড ২০ আগস্ট ২০১৮, ০৩:০৮

ishak

সময় এখন বড় জটিল; আয়ুষ্কাল আমাদের বেড়েছে, কিন্তু অক্ষত শরীর কি ধরে রাখতে পারছি? এই সময়ে কীভাবে তা ধরে রেখেছেন ইসাহাক আলী? সেই গল্প শোনাচ্ছেন শাম্মী আক্তার

সুস্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল- এ কথার কোনো বিকল্প নেই। আজকের বিশ্বে মানুষের সবচেয়ে কমন সমস্যা হচ্ছে লাইফস্টাইল সম্পর্কিত অসুখ! একদিকে যেমন অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি মানুষের জীবনকে সহজ করে দিচ্ছে, তেমনি অন্যদিকে মানুষকে বাতব্যাধিগ্রস্ত করে তুলছে।

এই অতি সহজ জীবন যাপনই মানুষের লাইফস্টাইল অসুখ যেমন ডায়াবেটিস, স্ট্রোক, উচ্চ রক্তচাপ, ইত্যাদির অন্যতম অনুঘটক। আগের দিনে ছিল না এত যানবাহন, যন্ত্রপাতি, গৃহস্থালি জিনিসপত্র। দিনে দিনে যত প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ছে, তত মানুষের হাত-পায়ের ব্যবহার কমছে! এগুলো আবার মনের জটিলতা/কুটিলতা বাড়িয়ে দিচ্ছে, যা প্রকারন্তে খাদ্যে ভেজালকে উস্কে দিচ্ছে, যা আবার বিভিন্ন অসুখের সূত্রপাত ঘটাচ্ছে। যতদিন মনের ভেজাল দূর না হবে, ততদিন খাদ্যে ভেজাল দূর করা কঠিন হবে।

আগের দিনে তো এতো প্রযুক্তির ব্যবহার ছিল না, ছিল না এত প্রিজারভেটিভ! মানুষ ভেজালমুক্ত খাবার তৈরি করত, খেত এবং শারীরিক ও মানসিক ভাবেভাল থাকত, বিশুদ্ধভাবে বাঁচত। এখন আমাদের জীবন গাড়ি খুব একটা হাঁটে না, দৌড়ায় না, স্রেফ বসে বসে চলে। কখনো বাইকে বসে বা অন্য কোনো যানবাহনে বসে বা চার চাকার ব্যক্তিগত যানবাহনে বসে জীবন চলে। প্রাকৃতিক বাতাস ও আমরা দূষিত করে ফেলেছি। তাই সবাই বাড়িতে বসে, গাড়িতে বসে কৃত্রিম ঠাণ্ডা বাতাস নিতে পছন্দ করে।

এটা ঠিক বর্তমানে মানুষের আয়ুষ্কাল বেড়েছে (৭২ বছর) কিন্তু এই আয়ুষ্কাল কাটাতে গিয়ে মানুষের শরীর এক একটা ঔষধের দোকান হয়ে ওঠে। মানুষকে মুড়ি মুড়কির মতো ট্যাবলেট খেতে হয়। অতি প্রক্রিয়াজাত কেমিক্যাল সমৃদ্ধ খাবার খেয়ে খেয়ে আমাদের শরীরে অপ্রয়োজনীয় অপ্রত্যাশিত আবর্জনা বেশি হয়ে যাচ্ছে। শরীরের নিজস্ব রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা কাঙ্ক্ষিত সুরক্ষা দিতে পারছে না। শরীরের সৈন্য বাহিনীর ক্ষমতার তুলনায় বাইরের অপ্রয়োজনীয় জিনিস বেশি শরীরে ঢুকে যাচ্ছে। গলায় উন্নত মানের ফিল্টার থাকলে মনে হয় একটু ভালো হত। যাই হোক, আমাদের এই অলস আবর্জনাময় শরীরের গল্পের মাঝেও কিছু অনুকরণীয় দীর্ঘ জীবনের গল্প আছে।

কুষ্টিয়া জেলার আব্দালপুর ইউপির ইসাহাক আলী মাষ্টার, বয়স ১০০ বছরের বেশি।

বার্ধক্যজনিত দুর্বলতা ছাড়া তেমন কোনো অসুখ নেই। তার সাদা চকচকে দাঁত দেখলে যে কোনো টুথপেস্ট কোম্পানি ছুটে আসবে তাকে তাদের পেস্টের বিজ্ঞাপনের মডেল বানাতে। শতোর্ধ্ব বয়সেও মাংসের হাড্ডি পছন্দ করেন তিনি । গরুর মাংস সাধারণত এড়িয়ে চলেন। প্রতিদিন ভোর বেলা ঘুম থেকে উঠে নিমের ডালের মেসওয়াক দিয়ে দাঁত পরিষ্কার করেন। তারপর একটু সিদ্ধ ছোলা, একটি সিদ্ধ ডিম, সাথে কালো জিরা মধু। এগুলো তার প্রতিদিন সকালের খাদ্যাভাস।

সর্বোপরি তার দৈনন্দিন খাদ্যাভাস খুবই বুদ্ধিদীপ্ত। মুখ তার সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে। মুখে এমন কিছু দেন না যেটা তার শরীর গাড়িকে বিগড়েদিয়ে বিকল করতে পারে। শরীরের বিনোদনের জন্য খেয়েছেন তো মরেছেন! খাওয়া হতে হবে শরীর ফিট রাখার জন্য। সাধারণত তিনি বাইরের খাবার এড়িয়ে চলেন। তার নেই কোন চা, বিড়ি, সিগারেট, পান বা গুলের নেশা। তবে খাবারের পরে জোয়াইন খেতে তার ভুল হয়না। এই সব পরিমিত খাদ্যাভাস এবং জীবনাভ্যাসই তার এই দীর্ঘ জীবনের মন্ত্র।

পাশাপাশি আমি মনে করি তার এই শতোর্ধ আয়ুর আরেকটি অন্যতম অনুঘটক হল তার বন্ধু -বাইসাইকেল। কয়েক বছর আগেও বাইসাইকেলই ছিল তার একমাত্র বাহন। এভাবে সারাজীবন মানুষের সেবাই কাটিয়ে দিয়েছেন তিনি ।

বর্তমানে জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি। প্রাক্তন স্কুল শিক্ষক ও সাবেক ইউ পি চেয়ারম্যান, স্কুল ও কলেজ এর সাবেক সভাপতি। যদিও এখন পায়ের বল কমতে শুরু করেছে তবুও গাড়ি থামিয়ে রাখতে নারাজ তিনি। এখনও স্কুলের মিটিং, দলীয় মিছিল মিটিং এর সামনে থাকতে ভালবাসেন। এই বয়সেও সবার বিপদে ভূমিকা রাখার চেষ্টা করেন। আসলে গতি কমলেও মনের স্পিরিট এতটুকুও কমে নাই।

আসলে দৃশ্যমান জঞ্জালের সাথে অদৃশ্যমান জঞ্জাল আমাদের শরীর নামক এই দুই চাকার গাড়িকে দুঘটনাপ্রবণ করে তোলে।

শারিরিক-মানসিক উভয় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটায়। আমরা ভুলে যাই নিজের শরীর গাড়িটা ফিট না থাকলে অন্য যত বিলাসবহুল গাড়িই থাকুক না কেন, লাভ নেই। বিছানায় পড়ে থাকতে হবে, গাড়িতে আর চড়া হবেনা। আসলে সুস্থ থাকার জন্য, শরীর গাড়ি ঠিক মতো চালানের জন্য সবারই এবিসি অব হেল্থ এন্ড নিউট্রশন এডুকেশন থাকা দরকার।

যাই হোক, এই বয়সেও ইসাহাক আলী মাস্টার এর গাড়ি এখন পর্যন্ত ঠিক ঠাক চলছে। এখনও কোনো পার্টস বদলাতে হয় নাই, কোনো দুর্ঘটনাও ঘটে নাই। তার ইচ্ছা সবাই যেন আমরা নিজের নিজের গাড়ির প্রতি যত্নশীল হই এবং ভালো থাকি।

(লেখক পরিচিত: শাম্মী আক্তার;  সহকারী অধ্যাপক, ফলিত পুষ্টি ও খাদ্য প্রযুক্তি বিভাগ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া)

নোটিশ: স্বাস্থ্য বিষয়ক এসব সংবাদ ও তথ্য দেওয়ার সাধারণ উদ্দেশ্য পাঠকদের জানানো এবং সচেতন করা। এটা চিকিৎসকের পরামর্শের বিকল্প নয়। সুনির্দিষ্ট কোনো সমস্যার জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়াই শ্রেয়।

স্বাস্থ্য সেবায় যাত্রা শুরু

আঙুর কেন খাবেন?

ছোট এ রসালো ফলটিতে আছে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, খনিজ ও ভিটামিন। আঙুরে রয়েছে ভিটামিন কে, সি, বি১, বি৬ এবং খনিজ উপাদান ম্যাংগানিজ ও পটাশিয়াম। আঙুর কোষ্ঠকাঠিন্য, ডায়াবেটিস, অ্যাজমা ও হৃদরোগের মতো রোগ প্রতিরোধে বিশেষ ভূমিকা রাখে।

সব টিপস...

চকলেটে ব্রণ হয়?

এই পরীক্ষাটি চালাতে গবেষকরা একদল ব্যক্তিকে এক মাস ধরে ক্যান্ডি বার খাওয়ায় যাতে চকলেটের পরিমাণ ছিল সাধারণ একটা চকলেটের চেয়ে ১০ গুণ বেশি। আরেক দলকে খাওয়ানো হয় নকল চকলেট বার। চকলেট খাওয়ানোর আগের ও পরের অবস্থা পরীক্ষা করে কোনো পার্থক্য তারা খুঁজে পাননি। ব্রণের ওপর চকলেট বা এতে থাকা চর্বির কোনো প্রভাব রয়েছে বলেও মনে হয়নি তাদের।

আরও পড়ুন...

      ভিটামিন ডির ঘাটতি পূরণে কী করণীয়?

300-250
promo3