কোরবানির ঈদে মাংস খান বুঝে
নিজস্ব প্রতিবেদক, হেলথ নিউজ | ২১ আগস্ট ২০১৮, ২১:০৮ | আপডেটেড ২৬ আগস্ট ২০১৮, ০৮:০৮
সারাবছর সাধ্যসাধনা করে মাংস খাওয়া সীমিত রাখলেও অনেকের সেই বাঁধ ভেঙে যায় কোরবানির ঈদে; এই অতিরিক্ত মাংস খাওয়া বিপদ ডেকে আনতে পারে বলে সতর্ক করেছেন চিকিৎসকরা।
গরু কিংবা ছাগলের মাংস পুষ্টি উপাদানের ভরপুর একটি খাবার। কিন্তু এই খাদ্যে পুষ্টি উপাদান বেশি থাকায় পরিমাণের চেয়ে অতিরিক্ত খেলে স্বাস্থ্য ঝুঁকি যায় বেড়ে। আর উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগসহ নানা সমস্যা যাদের রয়েছে, তাদের জন্য তো জটিলতা আরও বেশি।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজের হেপাটোলজি বিভাগের প্রধান ডা. মোহ. হারুন-অর রশীদ হেলথ নিউজকে বলেন, কোরবানিতে মাংস খাওয়ার ক্ষেত্রে সবাইকে একটু সাবধান হতে হবে। কারণ এই খাওয়া থেকে শরীরে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে।
তিনি বলেন, “আমাদের খাবারের মাঝে আমিষ, কার্বহাইড্রেট, চর্বি সব উপাদান দরকার রয়েছে। কিন্তু হঠাৎ করে আমিষের পরিমাণ বা চর্বির পরিমাণ বেশি হয়ে গেলে তা হজমের ক্ষেত্রে বাড়তি প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে থাকে।”
হজমের জটিল প্রক্রিয়াটি সাবলীল রাখতে যে কোনো সময়েই পেট ভর্তি করে না খাওয়ার পরামর্শ এই চিকিৎসকের।
তিনি বলেন, “আমাদের পাকস্থলিকে যদি তিনটা ভাগ করি তবে দুই অংশ ভর্তি করা যাবে এবং এক অংশ ফাঁকা রাখতে হবে। আমাদের পাকস্থলি যেহেতু সবসময় সম্প্রসারণ এবং সংকোচন হয়। এই সংকোচনের জন্য পেট ভর্তি থাকলে খাবারটা খাদ্যনালীতে চলে এলে বুক জ্বালাপোড়া করে, পাকস্থলিতে ঘায়ের সৃষ্টি হয়।”
মাংস বেশি খেয়ে সমস্যা দেখা দিলে চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার পরামর্শ দেন ডা. হারুণ। পাশাপাশি মাংসের পাশাপাশি শাক-সবজি খাওয়ার পরামর্শও দিয়েছেন তিনি।
মাংসে আছে কী
পুষ্টি বিশেষজ্ঞরা জানান, কোলেস্টেরল, ফ্যাট অন্যান্য খাবারের চেয়ে মাংসে বেশি থাকে। অতিরিক্ত মাংস খেলে রক্তে চর্বির মাত্রা বেড়ে যায় এবং হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়। মাংসের ঝোলে থাকে প্রচুর পরিমাণে চর্বি, যা রক্তনালিতে জমে এথেরোসক্লেরসিস ঘটাতে পারে। এ থেকে স্ট্রোক ও হার্ট অ্যাটাকও হতে পারে।
মাংসে প্রোটিনের পরিমাণও বেশি থাকে। এটা কিডনি রোগের ঝুঁকি বাড়ায়; বাড়িয়ে তোলে রক্তে ইউরিক এসিডের মাত্রা।
মাংসে রয়েছে অতিরিক্ত সোডিয়াম, যা আবার উচ্চ রক্তচাপ সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখে।
পুষ্টিবিদর তথ্য অনুযায়ী, এক টুকরো মাংসে পুষ্টি উপাদানের মাঝে ১০০ গ্রাম থেকে ৪৯৮ থেকে ৫৪৮ কিলোক্যালরি শক্তি পাওয়া যায়।
দৈনিক মাংস খাওয়ার নিরাপদ মাত্রা হল ৩ আউন্স বা ৮৫ গ্রাম। যদি ৩ আউন্স বা ৮৫ গ্রাম চর্বি ছাড়া মাংস খাওয়া হয়, তাহলে দৈনিক ক্যালরির চাহিদার ১০ শতাংশ পাওয়া যাবে। ৩ আউন্স মাংসে রয়েছে ২০০ ক্যালরি।
সাধারণত বাসায় ৩ টুকরো মাংসেই ৩ আউন্স হয়ে যায়, তাই খাবার সময় তিন টুকরোর বেশি না খাওয়ার পরামর্শই দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।
৩ আউন্স মাংসে কোলেস্টেরলের মাত্রা ৫৩ মিলিগ্রাম। তাই একজন সুস্থ মানুষের কোলেস্টেরলের দৈনিক নিরাপদ মাত্রা ৩০০ মিলি গ্রাম এবং হার্টের রোগীদের ২০০ মিলি গ্রাম খাওয়া ভালো বলে মনে করে চিকিৎসকরা।
সমস্যা এড়িয়ে খাবেন কীভাবে
রাজশাহী মেডিকেল কলেজের কার্ডিওলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক বজলুল গণি ভূইঞা হেলথ নিউজকে বলেন, মাংস খাওয়ার সময় খেয়াল রাখতে হবে যেন সীমা অতিক্রম না হয়। যাদের কোলেস্টরেল পরিমাণ বেশি তাদের খুব নিয়ম মাফিক মাংস খেতে হবে।
যাদের কোলেস্টেরলের মাত্রা বেশি তাদের চিকিৎসকের পরামর্শ অনুয়ায়ী মাংস খাওয়া উচিৎ বলে মনে করেন তিনি।
“একজন মানুষ দিনে ৩ টুকরো মাংস খেতে পারবেন। কিন্তু যাদের কোলস্টেরলের পরিমাণ অনেক বেশি তাদের এক টুকরো মাংস খাওয়া উত্তম। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুয়ায়ী না খেলে হৃদরোগীরা অনেক বড় সমস্যায় পড়বেন।”
রাজশাহী মেডিকেল কলেজের কার্ডিওলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. এম এ খালেক বলেন, “রেড মিটে প্রচুর পরিমাণে চর্বি রয়েছে, যা হৃদরোগ বা কোলস্টেরল যাদের বেশি তাদের জন্য খুবই ক্ষতিকর। তাদের জন্য মাংস খাওয়ার সবচেয়ে ভালো উপায় হচ্ছে, শিক কাবাব করে খেতে পারবে। কাবাব করলে চর্বি আগুনে ঝলসে য়ায়।”
মাংস খাওয়ার চর্বি বর্জনের পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, “বাচ্চাদের চর্বিটা দিয়ে বড়রা মাংসটা খেলে অনেক ভালো।”
তাই ঈদের আনন্দ যেন নিরানন্দের না হয়, সেজন্য মাংসটা বুঝেই খাওয়া উচিৎ।
নোটিশ: স্বাস্থ্য বিষয়ক এসব সংবাদ ও তথ্য দেওয়ার সাধারণ উদ্দেশ্য পাঠকদের জানানো এবং সচেতন করা। এটা চিকিৎসকের পরামর্শের বিকল্প নয়। সুনির্দিষ্ট কোনো সমস্যার জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়াই শ্রেয়।
স্বাস্থ্য সেবায় যাত্রা শুরু
আঙুর কেন খাবেন?
ছোট এ রসালো ফলটিতে আছে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, খনিজ ও ভিটামিন। আঙুরে রয়েছে ভিটামিন কে, সি, বি১, বি৬ এবং খনিজ উপাদান ম্যাংগানিজ ও পটাশিয়াম। আঙুর কোষ্ঠকাঠিন্য, ডায়াবেটিস, অ্যাজমা ও হৃদরোগের মতো রোগ প্রতিরোধে বিশেষ ভূমিকা রাখে।
সব টিপস...
চকলেটে ব্রণ হয়?
এই পরীক্ষাটি চালাতে গবেষকরা একদল ব্যক্তিকে এক মাস ধরে ক্যান্ডি বার খাওয়ায় যাতে চকলেটের পরিমাণ ছিল সাধারণ একটা চকলেটের চেয়ে ১০ গুণ বেশি। আরেক দলকে খাওয়ানো হয় নকল চকলেট বার। চকলেট খাওয়ানোর আগের ও পরের অবস্থা পরীক্ষা করে কোনো পার্থক্য তারা খুঁজে পাননি। ব্রণের ওপর চকলেট বা এতে থাকা চর্বির কোনো প্রভাব রয়েছে বলেও মনে হয়নি তাদের।
আরও পড়ুন...
ভিটামিন ডির ঘাটতি পূরণে কী করণীয়?