চিকিৎসা সেবায় ধর্মঘট ডাকাকে ‘অন্যায়’ বলল হাইকোর্ট
নিজস্ব প্রতিবেদক, হেলথ নিউজ | ৯ জুলাই ২০১৮, ১৯:০৭ | আপডেটেড ১১ জুলাই ২০১৮, ০১:০৭
মানুষ হিসেবে চিকিৎসকদেরও ভুল হতে পারে, কিন্তু সেই ভুলকে যৌক্তিক করার প্রয়াসে তাদের ধর্মঘট ডাকা অন্যায় ও অনৈতিক।
‘ভুল চিকিৎসা’ নিয়ে একটি রিট আবেদনের শুনানিতে চট্টগ্রামে বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে ধর্মঘট ডাকার প্রসঙ্গ তুলে বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহসান ও বিচারপতি কামরুল কাদেরের হাইকোর্ট বেঞ্চ সোমবার এই মন্তব্য করে।
চট্টগ্রামের ম্যাক্স হাসপাতালে এক শিশুর মৃত্যু অবহেলার কারণে হওয়ার বিষয়টি তদন্তে উঠে আসার মধ্যে রোববার সেখানে অভিযান চালিয়ে অনিয়মের প্রমাণ পেয়ে ১০ লাখ টাকা জরিমানা করে ভ্রাম্যমাণ আদালত।
এরপর চট্টগ্রামের সব বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিক মালিকরা ধর্মঘট ডাকলে রোগীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়। ২০ ঘণ্টা পর সোমবার সেই ধর্মঘট অবশ্য প্রত্যাহার করা হয়।
আদালত বলেছে, “ডাক্তার দেবতা নন। ভুল হবে সেটা স্বাভাবিক। ভুলটা অন্যায় নয়। কিন্তু ভুলটা জাস্টিফায়েড করার জন্য হরতাল ডাকা হলে সেটা অন্যায়।”
আদালত আরও বলে, “মানুষ মাত্রই ভুল হয়। আমাদেরও ভুল হয়। আমাদের ভুল সংশোধনের জন্য সর্বোচ্চ আদালত আছে। কিন্তু ডাক্তাররা ভুল করলে এবং তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হলে, তার প্রতিবাদ হিসেবে হরতাল ডাকা অনৈতিক।
“মানুষ বিপদে পড়লে তিন পেশার মানুষের কাছে যায়। পুলিশ, আইনজীবী ও ডাক্তারের শরণাপন্ন হয়। কিছু দুর্বৃত্তের কারণে যদি এই তিন পেশার পেশাদারিত্ব ধ্বংস হয়, তাহলে মানুষ বিপদে পড়বে।”
চুয়াডাঙ্গায় ‘ইম্প্যাক্ট মাসুদুল হক মেমোরিয়াল কমিউনিটি হেলথ সেন্টার’র চক্ষু শিবিরের অস্ত্রোপচারে ২০ জনের ‘চোখ হারানো’র ঘটনায় করা রিট আবেদনের রুলের শুনানিতে এই মন্তব্য করে আদালত।
তলবের আদেশ পেয়ে এ দিন আদালতে হাজির হয়েছিলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ।
বেসরকারি হাসপাতালগুলোর ধর্মঘটের খবর মহাপরিচালককে দেখিয়ে আদালত বলে, “চট্টগ্রামে যা হয়েছে, সেটি দুঃখজনক। আজকের মামলার সঙ্গে এটি সম্পর্কিত নয়। কিন্তু যেহেতু আপনি আছেন, তাই বলছি।”
আদালত বলে, “কতিপয় দুর্বৃত্তের কারণে চিকিৎসা সেবার সুনাম নষ্ট হচ্ছে। দেশে অনেক স্বনামধন্য চিকিৎসক এবং ভালো মানের চিকিৎসা সেবার সুযোগ থাকা সত্ত্বেও ভুল চিকিৎসার ভয়ে রোগীরা পার্শ্ববর্তী দেশে চলে যাচ্ছে।
“এতে দেশীয় মুদ্রা বিদেশে চলে যাচ্ছে। এ ধরনের পরিস্থিতি কমিয়ে আনার জন্য আপনাকে (স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. আবুল কালাম আজাদ) বলা হল।”
এরপর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, “আমরা মহামান্য আদালতের সঙ্গে একমত। আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছি। চট্টগ্রামে ইতোমধ্যে ধর্মঘট প্রত্যাহার করা হয়েছে।”
মানবিক সেবায় ধর্মঘট ‘সংবিধান লঙ্ঘনের শামিল’
চট্টগ্রামের ঘটনার প্রসঙ্গ ধরে চিকিৎসার মতো মানবিক সেবায় ধর্মঘট ‘সংবিধানের লঙ্ঘন’ বলে মত দিয়েছেন আইনজীবী ও মানবাধিকার সংগঠনের নেতারা।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সুরাইয়া নাসরিন হেলথ নিউজকে বলেন, “চট্টগ্রামের চিকিৎসকরা যে কৌশল নিয়েছেন, সেই কৌশলে চিকিৎসকরা ‘সফল’ হয়েছেন বারবার। রোগী পিটিয়ে, স্বজন পিটিয়ে, ভুল চিকিৎসা করে বা সরকারি হাসপাতাল ফেলে বেসরকারি হাসপাতালে গিয়ে কাজ করে পাওয়া শাস্তি তারা প্রত্যাহার করে নিয়েছেন রোগীদেরকে জিম্মি করেই।”
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী খন্দকার হাসান শাহরিয়ার হেলথ নিউজকে বলেন, “আমাদের সংবিধানে পাঁচটি মৌলিক চাহিদার মধ্যে ‘চিকিৎসা’ অন্যতম। দেশের সকল আইনের ঊর্ধ্বে হল হল ‘সংবিধান’। সেখানে স্পষ্টভাবে বলা আছে, চিকিৎসা সেবা পাওয়া নাগরিকের অধিকার। কেউ অপরাধ করলে তার বিরুদ্ধে সাজা বা জরিমানা হলে সেবা বন্ধ করে দেবে এটা তো মানবাধিকার লঙ্ঘন।”
কোনো পদক্ষেপে চিকিৎসকরা অসন্তুষ্ট হলে প্রতিবাদের জন্য কালো ব্যাজ ধারণ, মানববন্ধন বা সাময়িক কর্মবিরতি গ্রহণযোগ্য বলে মনে করেন এই আইনজীবী। তিনি বলেন, “কিন্তু তা না করে চিকিৎসা সেবা বন্ধ করা শুধু অন্যায় নয় মহাঅন্যায়।”
হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের সভাপতি ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মনজিল মোরসেদ হেলথ নিউজকে বলেন, “আসলে ডাক্তারদের এভাবে ধর্মঘট আইন সমর্থন করে না। কিন্তু যেহেতু সুস্পষ্ট ঘোষণা নেই, তাই আমরা এই ধরনের ধর্মঘটকে অবৈধ ঘোষণার দাবিতে হাইকোর্টে ২০১৬ সালের মাঝামাঝি সময়ে একটি রিট আবেদন করেছিলাম। কিন্তু সেটির এখনও শুনানি হয়নি।”
তিনি বলেন, “সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকরা ধর্মঘট করতে পারে না, কারণ তারা সরকারের চাকরি করে। বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকদের একটি অংশও সরকারি হাসপাতালে কাজ করেন। যারা তা করেন না তারাও মৌলিক অধিকারের একটি স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করেন। তাদের কাজ মানুষের জীবনের সাথে সম্পর্কিত। তাই চিকিৎসা দেবে না এমন কোন ধর্মঘট তারা ডাকতে পারে না। কেউ যদি করে তাহলে তা সম্পূর্ণভাবে আইনের পরিপন্থি।”
মানবাধিকার সংগঠন বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশন (বিএইচআরএফ) নির্বাহী পরিচালক এলিনা খান বলেন, ‘তারা যে চিকিৎসা সেবা বন্ধ করেছে এটা সম্পূর্ণ বেআইনি। মেডিকেলের শিক্ষার্থীরা যখন মেডিকেল থেকে বের হয় তখন তারা একটা শপথ নেয় যে, তারা রোগীদের সর্বাত্মকভাবে সহযোগিতা করবে এবং কোনো হরতাল বা ধর্মঘটে যাবে না। কারণ এটা মানবিক সেবা। সুতরাং তাদের শপথের বরখেলাপ করে তারা যে কোন কর্মসূচি দিয়েছে সেটা বেআইনি।”
বিষয়: special5
নোটিশ: স্বাস্থ্য বিষয়ক এসব সংবাদ ও তথ্য দেওয়ার সাধারণ উদ্দেশ্য পাঠকদের জানানো এবং সচেতন করা। এটা চিকিৎসকের পরামর্শের বিকল্প নয়। সুনির্দিষ্ট কোনো সমস্যার জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়াই শ্রেয়।
স্বাস্থ্য সেবায় যাত্রা শুরু
আঙুর কেন খাবেন?
ছোট এ রসালো ফলটিতে আছে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, খনিজ ও ভিটামিন। আঙুরে রয়েছে ভিটামিন কে, সি, বি১, বি৬ এবং খনিজ উপাদান ম্যাংগানিজ ও পটাশিয়াম। আঙুর কোষ্ঠকাঠিন্য, ডায়াবেটিস, অ্যাজমা ও হৃদরোগের মতো রোগ প্রতিরোধে বিশেষ ভূমিকা রাখে।
সব টিপস...
চকলেটে ব্রণ হয়?
এই পরীক্ষাটি চালাতে গবেষকরা একদল ব্যক্তিকে এক মাস ধরে ক্যান্ডি বার খাওয়ায় যাতে চকলেটের পরিমাণ ছিল সাধারণ একটা চকলেটের চেয়ে ১০ গুণ বেশি। আরেক দলকে খাওয়ানো হয় নকল চকলেট বার। চকলেট খাওয়ানোর আগের ও পরের অবস্থা পরীক্ষা করে কোনো পার্থক্য তারা খুঁজে পাননি। ব্রণের ওপর চকলেট বা এতে থাকা চর্বির কোনো প্রভাব রয়েছে বলেও মনে হয়নি তাদের।
আরও পড়ুন...
ভিটামিন ডির ঘাটতি পূরণে কী করণীয়?