ম্যাক্স হাসপাতালকে ১০ লাখ টাকা জরিমানা
নিজস্ব প্রতিবেদক, হেলথ নিউজ | ৮ জুলাই ২০১৮, ১৯:০৭ | আপডেটেড ৮ জুলাই ২০১৮, ১০:০৭
চট্টগ্রামে আলোচিত ম্যাক্স হাসপাতালে অভিযান চালিয়ে বিভিন্ন অনিয়ম পাওয়ার পর ১০ লাখ টাকা জরিমানা করেছে র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত।
অভিযান শেষে রোববার বিকালে শহরের মেহেদীবাগ এলাকার ম্যাক্স হাসপাতালে এক ব্রিফিংয়ে অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলম বলেন, অভিযানে আমরা ম্যাক্স হাসপাতালে বিভিন্ন রকমের অনিয়ম ও গাফিলতির প্রমাণ পেয়েছি।
“তাদের দশ লাখ টাকা জরিমানা করার পাশাপাশি গাফিলতি সংশোধনের জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে ১৫ দিন সময় দেওয়া হয়েছে।”
একটি হাসপাতাল চালাতে হলে নমুনা পরীক্ষার নিজস্ব ব্যবস্থা থাকার নিয়ম থাকলেও মাক্সে সে নিয়ম অনুসরণ করা হয় না জানিয়ে তিনি বলেন, একজন নমুনা সংগ্রহ করে, অন্যজন পরীক্ষা করে, আবার অ্যানালাইসিস করা হয় অন্য জায়গায়। এভাবে রিপোর্ট তৈরি হচ্ছে ম্যাক্সের ল্যাবে।
“ওনারা টেস্ট করে নাই। অন্য জায়গায় টেস্ট করার পরে ওনাদের প্যাথলজিস্টরা ওনাদের প্যাডে সিগনেচার করে দিয়ে দিচ্ছেন। এটা আইনত করা যায়না।”
ম্যাক্সের বায়োকেমিস্ট্রি ল্যাবে কিছু মেয়াদোত্তীর্ণ রি-এজেন্ট পাওয়া গেছে জানিয়ে সারোয়ার আলম বলেন, অপারেশন থিয়েটারে মিলেছে কিছু অনুমোদনহীন ওষুধ। কিছু সার্জিক্যাল আইটেমেরও মেয়াদোত্তীর্ণ ছিল।
ম্যাক্সের ফার্মেসির ড্রাগ লাইসেন্সের মেয়াদ ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে শেষ হয়ে গেলেও তারা নিয়ম ভেঙে ওষুধ বিক্রি করে আসছিল।
এ সমস্ত কারণেই দশ লাখ টাকা জরিমানা করার পাশাপাশি গাফিলতি সংশোধনের জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে ১৫ দিন সময় দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
“আমরা আশা করছি অদূর ভবিষ্যতে তারা একটি ভাল প্রতিষ্ঠানে রূপ নেবে। সুস্থ্য চিকিৎসার সব ধরণের হয়রানি বন্ধ হোক। চিকিৎসা পাওয়া মানুষের সাংবিধানিক অধিকার।”
এদিকে ম্যাক্স হাসপাতালে এই অভিযানের প্রতিবাদে বৃহত্তর চট্টগ্রামে সব বেসরকারি হাসপাতালে অনির্দিষ্টকালের জন্য সেবা বন্ধ রাখার ঘোষণা দেন মালিকরা।
এ বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলম বলেন, “কোন ব্যক্তিকে যদি কেউ সেবা দিতে না চায় বাংলাদেশের সংবিধান ধারা ১৫, ২১ ও ৫০ অনুসারে এটা একটা সাংঘাতিক অপরাধ। আইনের ঊর্ধে কেউ না। প্রত্যেককে আইন মানতে হবে। এটা কেউ ব্যহত করলে তারা আইনের আওতায় আসবে। যদি কেউ এই সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে আমরা আশা করব তারা সেখান থেকে ফিরে আসবে।”
পৃথিবীর অন্য দেশ হলে হয়ত বন্ধ করে দেয়া হত মন্তব্য করে সারোয়ার আলম বলেন, প্রাথমিকভাবে তাদের সুযোগ দেয়া হয়েছে। তারা সংশোধন না করলে অদূর ভবিষ্যতে বন্ধ করে দেয়া হবে।
“অভিযান অব্যাহত থাকবে। সরকারের ওপর ক্ষমতাশালী কেউ নয়। সবাই আইন মানতে বাধ্য। প্রয়োজনে এ ধরনের প্রতিষ্ঠান দুই একটা বন্ধ হয়ে গেলে মঙ্গল।”
বেসরকারি হাসপাতাল মালিকদের উদ্দেশে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলম বলেন, “পলিসি লেভেলে আলোচনা করতে চাইলে সরকারের সাথে করতে পারেন। কিন্তু আমাদের বাধা দেওয়ার চেষ্টা করবেন না। তদারকিতে বাধা দিতে চাইলে অবশ্যই আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। স্বাস্থ্য সেবা নিয়ে কাউকে সরকার ছিনিমিনি খেলতে দেবে না।
বেলা সাড়ে ১১টার দিকে মেহেদীবাগ এলাকার ম্যাক্স হাসপাতাল, ওআর নিজাম রোডের মেট্রোপলিটন হাসপাতাল আর প্রবর্তক মোড়ের সিএসসিআর হাসাপাতালে একযোগে অভিযান শুরু হয়।
ম্যাক্স হাসপাতালে অভিযানে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রতিনিধি হিসেবে ডা. দেওয়ান মাহমুদ মেহেদি হাসানও উপস্থিত ছিলেন।
দৈনিক সমকালের চট্টগ্রাম ব্যুরোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রুবেল খানের আড়াই বছর বয়সী মেয়ে রাইফা গলায় ব্যথা নিয়ে গত ২৮ জুন বিকালে ম্যাক্স হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পরদিন রাতে তার মৃত্যু হয়।
সাংবাদিকরা এই মৃত্যুর জন্য কর্তব্যরত চিকিৎসক ও নার্সদের অবহেলাকে কারণ দেখিয়ে তাদের শাস্তি দাবিতে বিক্ষোভ করেন ওই রাতেই।
পরে ঘটনা তদন্তে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে একটি কমিটি করে দেওয়া হয়। পাশাপাশি চট্টগ্রামের সিভিল সার্জনের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি কমিটিও এ ঘটনার তদন্ত করে।
চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. আজিজুর রহমান সিদ্দিকী নেতৃত্বাধীন তদন্ত কমিটি বৃহস্পতিবার তাদের প্রতিবেদন জমা দেয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে।
প্রতিবেদনে এই দুই চিকিৎসকের পাশাপাশি শিশু বিশেষজ্ঞ বিধান রায়কেও চিকিৎসায় ‘অবহেলার দায়ে’ অভিযুক্ত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, “রাইফা যখন তীব্র খিঁচুনিতে আক্রান্ত হয় তখন সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকদের অনভিজ্ঞতা ও আন্তরিকতার অভাবের প্রমাণ মেলে এবং ওই সময়ে থাকা সংশ্লিষ্ট নার্সদের আন্তরিকতার অভাব না থাকলেও এ রকম জটিল পরিস্থিতি মোকাবেলা করার মতো দক্ষতা বা জ্ঞান তাদের ছিল না।
ওই প্রতিবেদন পাওয়ার পর শিশু ওয়ার্ডে সেদিন দায়িত্বরত চিকিৎসক ডা. দেবাশীষ সেন গুপ্ত ও ডা. শুভ্র দেবকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে বলে শনিবার জানান হাসপাতালের পরিচালক ডা. লিয়াকত আলী খান।
সিভিল সার্জনের কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়, “রাইফা যখন তীব্র খিঁচুনিতে আক্রান্ত হয় তখন সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকদের অনভিজ্ঞতা ও আন্তরিকতার অভাব পরিলক্ষিত হয় এবং ওই সময়ে থাকা সংশ্লিষ্ট নার্সদের আন্তরিকতার অভাব না থাকলেও এ রকম জটিল পরিস্থিতি মোকাবেলা করার মতো দক্ষতা বা জ্ঞান কোনোটাই তাদের ছিল না।
“শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. বিধান রায় চৌধুরী শিশুটিকে যথেষ্ট সময় ও মনোযোগ সহকারে পরীক্ষা করে দেখেননি। ডা. দেবাশীষ সেন গুপ্ত ও ডা. শুভ্র দেব শিশুটির রোগ জটিলতার বিপদকালীন সময়ে আন্তরিকতার সাথে সেবা দেননি বলে শিশুর পিতা-মাতা যে অভিযোগ উত্থাপন করেছেন, যাহা এই তিন চিকিৎসকের বেলায় সত্য বলে প্রতীয়মান হয়।”
বিষয়: special5
নোটিশ: স্বাস্থ্য বিষয়ক এসব সংবাদ ও তথ্য দেওয়ার সাধারণ উদ্দেশ্য পাঠকদের জানানো এবং সচেতন করা। এটা চিকিৎসকের পরামর্শের বিকল্প নয়। সুনির্দিষ্ট কোনো সমস্যার জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়াই শ্রেয়।
স্বাস্থ্য সেবায় যাত্রা শুরু
আঙুর কেন খাবেন?
ছোট এ রসালো ফলটিতে আছে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, খনিজ ও ভিটামিন। আঙুরে রয়েছে ভিটামিন কে, সি, বি১, বি৬ এবং খনিজ উপাদান ম্যাংগানিজ ও পটাশিয়াম। আঙুর কোষ্ঠকাঠিন্য, ডায়াবেটিস, অ্যাজমা ও হৃদরোগের মতো রোগ প্রতিরোধে বিশেষ ভূমিকা রাখে।
সব টিপস...
চকলেটে ব্রণ হয়?
এই পরীক্ষাটি চালাতে গবেষকরা একদল ব্যক্তিকে এক মাস ধরে ক্যান্ডি বার খাওয়ায় যাতে চকলেটের পরিমাণ ছিল সাধারণ একটা চকলেটের চেয়ে ১০ গুণ বেশি। আরেক দলকে খাওয়ানো হয় নকল চকলেট বার। চকলেট খাওয়ানোর আগের ও পরের অবস্থা পরীক্ষা করে কোনো পার্থক্য তারা খুঁজে পাননি। ব্রণের ওপর চকলেট বা এতে থাকা চর্বির কোনো প্রভাব রয়েছে বলেও মনে হয়নি তাদের।
আরও পড়ুন...
ভিটামিন ডির ঘাটতি পূরণে কী করণীয়?