Site icon Health News

এমন ভারতবর্ষ দেখেনি কেউ আগে

শ্মশানের দাউ দাউ আগুনের মধ্যেই ভারতবাসী পেলো আরো করুণ খবর। টানা ৬ দিন ধরে সাড়ে ৩ লাখের কাছাকাছি ছিল যে সংখ্যা তা এবার ৪ লাখও ছাড়িয়ে গেছে। 

শনিবার সকালে দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ৪ লাখ ১ হাজার ৯৯৩ জন করোনা ভাইরাস আক্রান্ত নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে। শুধু তাই নয়, মৃত্যুও রেকর্ড ভেঙ্গে চলেছে। অক্সিজেন নিয়ে হাহাকার থামেনি বিশাল দেশটির রাজ্যগুলোতে। এরই মধ্যে প্রধান প্রধান রাজ্যেগুলোতে ভ্যাকসিনের অভাবে বন্ধ হয়ে গেছে টিকাদান কেন্দ্রও। ভূ-রাজনীতিতে দিন দিন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠা ভারতে একুশ শতকে এত অসহায়ত্ব, এত হাহাকার ও মৃত্যুর মিছিল দেখেনি কেউ।

ফলে ভারতে শনাক্ত করোনাভাইরাস রোগীর মোট সংখ্যা এক কোটি ৯০ লাখ ছাড়িয়ে গেছে। মৃত্যুও ছাড়িয়েছে ২ লাখ ১১ হাজারের ঘরও।

গত ১৫ এপ্রিল থেকেই দেশটিতে দৈনিক দুই লাখের বেশি নতুন সংক্রমণ শনাক্ত হওয়া শুরু করে। এর এক সপ্তাহ আগে দৈনিক সংক্রমণ তিন লাখের ঘর ছাড়িয়ে যায়। সবশেষ এপ্রিলের শেষ সপ্তাহে সাড়ে ৩ লাখে ঘরে আসে সংক্রমণ। অক্সিজেনের কারণে হাহাকার উঠে রাজ্য গুলোতে। এরই মধ্যে একদিনে সংক্রমণ ৪ লাখ ছাড়ানোয় ওয়ার্ল্ড মিটারে নিজের অসহায়ত্বের জায়গা আরো শক্ত হলো ভারতেবর্ষের। 

 সবশেষ শনিবারের খবরও বলছে মৃত্যুর মিছিল দীর্ঘ হচ্ছে আরো। ২৪ ঘন্টায় মারা গেছেন ৩ হাজার ৫২৩ জন। হাসপাতালগুলো ঠাইহীন রোগীতে উপচে পড়ছে।

হাসপাতালগুলোতে শয্যা খালি না থাকাতে অনেক গুরুতর রোগীকে বাড়িতে রেখেই চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এতে দেশটিতে মহামারী পরিস্থিতি আরও জটিল আকার ধারণ করছে। দেশটিতে টানা পাঁচ দিন ধরে দৈনিক করোনভাইরাস রোগী শনাক্তের বিশ্বরেকর্ড হয়েছে।

সবশেষ খবর বলছে, ভারতে এই মুহূর্তে সক্রিয় রোগী রয়েছেন ৩২ লাখ ৬৮ হাজার ৭১০ জন। এমন বাস্তবতার মধ্যেই দেশে চলছে টিকাদান। তবে তা কমে আসছে টিকার অভাবে। জানা যাচ্ছে, করোনাভাইরাস মহামারীর দ্বিতীয় ঢেউয়ে মুমূর্ষু কয়েকটি রাজ্যে টিকার মজুদই নেই। ভ্যাকসিনের ঘাটতির কারণে মুম্বাই শহরের সব টিকাদান কেন্দ্র শুক্রবার থেকে তিনদিন বন্ধ রাখারও সিদ্ধান্ত নিয়েছে। টিকা নেওয়ার জন্য শত শত লোককে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর রাজ্য গুজরাটের প্রধান বাণিজ্যনগরী আহমেদাবাদে ।

বেশ কজন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ বলছেন, সংক্রমণের হার দৈনিক ১০ হাজার থাকার সময় করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে আনা গেছে মনে করে আত্মতুষ্ট হয়েছিল ভারত। বিধিনিষেধ তুলে উৎসব এবং রাজনৈতিক সমাবেশের অনুমোদন দিয়েছিল কর্তৃপক্ষ।

ফলে বিধান সভার নির্বাচনি আবহে হুহু করে সংক্রমণ বেড়ে যায় পশ্চিমবঙ্গেও। যার মধ্যে এপ্রিশের শুরুর দিকেও এ রাজ্যের করোনা টেস্টের পজিটিভিটি হার ছিল পাঁচ শতাংশ।শেষে গিয়ে যা বর্তমানে প্রায় পাঁচ গুণ বেড়ে ২৪ শতাংশে গিয়ে ঠেকেছে। কলকাতায় পজিটিভিটির হার বেড়েছে পাঁচ গুণ। বর্তমানে কলকাতায় করোনার আরটি-পিসিআর টেস্ট করানো প্রায় অর্ধেক মানুষের রিপোর্ট পজিটিভ আসছে। রাজ্যের অন্যান্য স্থানে পজিটিভিটি ২৪ শতাংশ। তবে কলকাতা ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় এই হার ৪৫ থেকে ৫৫ শতাংশ।

অথচ পশ্চিমবঙ্গজুড়ে ৭ এপ্রিল পজিটিভিটি হার ছিল ৮ দশমিক ১ শতাংশ। ১৫ এপ্রিল সেই হার বেড়ে দাঁড়ায় ১৬ শতাংশ। এক সপ্তাহ পরে, অর্থাৎ, ২৩ এপ্রিল রাজ্যের পজিটিভিটি হার ছিল ২৪ দশমিক ৩ শতাংশ। ২৪ এপ্রিল সেই হার ছিল ২৫ দশমিক ৯ শতাংশ।

Exit mobile version