Site icon Health News

খুলনা মেডিকেলে ইন্টার্ননির্ভর চিকিৎসা সেবায় মান নিয়ে প্রশ্ন

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা সময়মতো হাজির না হওয়ায় খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ইন্টার্ন (শিক্ষানবিশ) নির্ভর হয়ে পড়েছে। এতে চিকিৎসা সেবার মান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে রোগী ও তাদের স্বজনদের মধ্যে।

সদ্য এমবিবিএস পাস করা চিকিৎসকদের প্রশিক্ষিত করে তোলার অংশ হিসেবে হাসপাতালে ইন্টার্ন হিসেবে যুক্ত করা হয়। নিয়ম অনুযায়ী, তাদের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের কাছ থেকে হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ নেওয়ার কথা।

অভিযোগ উঠেছে, হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা নিজেদের ব্যক্তিগত চেম্বারে বেশি সময় দেওয়ায় শিক্ষানবিশদের দিয়েই চিকিৎসকদের কাজ চালানো হচ্ছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন, সার্জারি, গাইনি, অর্থোপেডিকস, শিশু বিভাগ, বার্ন ইউনিটসহ প্রতিটি ওয়ার্ডে ইন্টার্ন চিকিৎসকরাই চিকিৎসা দিচ্ছেন।

ওয়ার্ডগুলোতে সার্বক্ষণিক একজন সহকারী রেজিস্ট্রার ও প্রতিদিন সকাল সাড়ে ৮টা থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সেবা দেওয়ার কথা। কিন্তু ওয়ার্ডে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা দেরিতে আসেন, সন্ধ্যার পর থেকে সহকারী রেজিস্ট্রাররা হাসপাতালে থাকেন না।

রোগীরা জানায়, কম বয়সী ইন্টার্ন চিকিৎসকদের সবসময় ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিরা ঘিরে থাকেন। তাদের হাতের কলম, ব্যবহৃত প্যাড, দুপুরের খাবার সব কিছুই ওষুধ কোম্পানির দেওয়া। এসব সুবিধা নিয়ে ওই কোম্পানির ওষুধই লিখে থাকেন শিক্ষানবিশ চিকিৎসকরা।

অনুসন্ধানে জানা যায়, দীর্ঘদিনেও খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পরিচালক, সহকারী পরিচালক, আবাসিক ফিজিসিয়ান, আবাসিক সার্জনের পদই সৃষ্টি করা হয়নি। এছাড়া বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অধ্যাপক ও সহযোগী অধ্যাপকের অধিকাংশ পদই শূন্য। ফলে দুই ব্যাচের ১৩০জন ইন্টার্ন চিকিৎসক ভাগাভাগি করে ওয়ার্ডে চিকিৎসা কার্যক্রম চালাচ্ছেন।

হাসপাতালের শিশু সার্জারি বিভাগের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডা. অমর কান্তি হেলথ নিউজকে বলেন, “কোনো কারণে চিকিৎসক অনুপস্থিত বা ছুটিতে থাকলে তা অনেক সময় ইউনিটের অন্যরা জানতে পারেন না। ফলে পরিকল্পিতভাবে চিকিৎসা সেবা দেওয়া সম্ভব হয় না।”

এছাড়া যে সব ইউনিটে রোগী ভর্তির তারিখ থাকে না, সে ইউনিটে ইন্টার্ন চিকিৎসকদেরও সঠিক নিয়মে উপস্থিত না থাকার অভিযোগ রয়েছে।

বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির মহাসচিব শেখ আশরাফ উজ্জামান হেলথ নিউজকে বলেন, “দুপুরের পরপর বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা ব্যস্ত হয়ে পড়েন প্রাইভেট প্র্যাকটিসে। গভীর রাত পর্যন্ত বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক অথবা ব্যক্তিগত চেম্বারে রোগী দেখেন তারা। ফলে পরদিন সকালে সময়মতো হাসপাতালে উপস্থিত হতে পারেন না।

“বাড়তি অর্থ আয়ের পথ হিসেবে চিকিৎসকদের প্রাইভেট প্র্যাকটিসে ঝুঁকে পড়া, দায়িত্ব পালনে অবহেলা ও অতিমাত্রায় রাজনীতিকীকরণের প্রভাব এজন্য দায়ী।”

বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়শনের (বিএমএ) নেতা ডা. বাহারুল আলম হেলথ নিউজকে বলেন, এক্ষেত্রে চিকিৎসকদের নৈতিকতাই একটা বড় প্রশ্ন।

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) এর খুলনা জেলা সাধারণ সম্পাদক কুদরত-ই খুদা হেলথ নিউজকে বলেন, “বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা সময়মতো হাজির না হলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার বিধান চালু হলে পরিস্থিতির পরিবর্তন হবে।”

খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের তত্বাবধায়ক ডা. এ টি এম মঞ্জুর মোর্শেদ হেলথ নিউজের জিজ্ঞাসায় বলেন, “বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা দেরি করে রাউন্ডে আসায় রোগীদের মধ্যে হতাশা তৈরি হয়। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের অনেকে মেডিকেল কলেজে ক্লাস নিয়ে থাকেন বলে তাদেরকে কিছুটা ছাড় দেওয়া হয়।

“কিন্তু অনেকেই নির্ধারিত সময়ের পর হাসপাতালে আসেন। আবার নির্ধারিত সময়ের আগেই কর্মস্থল ছেড়ে চলে যান। খুলনা মেডিকেল কলেজ ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে বিষয়টি জানিয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে।”

খুলনা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. আব্দুল আহাদ হেলথ নিউজকে বলেন, “আলোচনা সাপেক্ষে চিকিৎসকদের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে ডিউটি রোস্টার ও হাজিরা খাতার ব্যবস্থা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।”

Exit mobile version