Site icon Health News

খোলা খাবারে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রাজশাহীর স্কুলশিশুরা

রাজশাহীর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর সামনে ভ্রাম্যমাণ দোকানের নানা খাবার শিশুদের স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে ফেলতে পারে বলে সতর্ক করেছেন চিকিৎসকরা।

এসব দোকানে চানাচুর, রং মেশানো আইসক্রিম, বিভিন্ন আচার, ফুচকা, চটপটি, ঝালমুড়ি, নুডলস, শরবত বিক্রি হতে দেখা যায়।

নগরীর সরকারি পিএন উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়, রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুল, রাজশাহী গভ. ল্যাবরেটরি স্কুল, বহুমুখী সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, হেলেনাবাদ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, স্কুলশিশুরা দেদারসে কিনছে এসব খাবার।

নগরীর প্রাণকেন্দ্রে রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুলের সামনে প্রতিদিন টিফিনের সময় স্কুলের গেইট বন্ধ থাকার পরও তার নিচ দিয়ে এসব খাবার কিনতে দেখা যায় শিশুদের। এচিত্র অন্য স্কুলগুলোতেও।

এ সব দোকানে খাবার ঢেকে রাখা হয় না বলে রাস্তার ধুলোবালি পড়ছে। খাবারের উপর উড়ছে মাছিও।

চিকিৎসকদের মতে, রাস্তার পাশে খোলা পরিবেশে বিক্রি হওয়া এসব খাবার খেলে শরীরের মধ্যে বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়া-ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে। এতে ডায়রিয়া, টাইফয়েড, জন্ডিস, হেপাটাইটিসসহ অনেক সংক্রামণ রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে।

স্কুলের সামনে এসব দোকানের বিষয়ে কলেজিয়েট স্কুলের প্রধান শিক্ষিক নূরজাহান বেগম হেলথ নিউজকে বলেন, “আমাদের বাচ্চাদের জন্য স্কুল থেকে টিফিনের ব্যবস্থা থাকে। আমরা বাচ্চাদের স্বাস্থ্যকর খাবার পরিবেশন করি। টিফিনের মেনুতে ডিম-খিচুড়ি, কলা রুটি, ভেজিটেবল রোলসহ বিভিন্ন স্বাস্থ্যকর খাবার দেওয়ার চেষ্টা করি।

“কিন্তু কিছু কিছু শিক্ষার্থী বাইরের এসকল খাবার না বুঝে খায়। আমরা তাদের ক্লাসে এসকল খাবার খেতে নিষেধ করি। স্কুলের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অভিভাবকদের মাধ্যমে তাদের সচেতন করার চেষ্টা করি।”

কলেজিয়েট স্কুলের সামনে এক অভিভাবক নারগিস সুলতানা হেলথ নিউজকে বলেন, “আমরা বাচ্চাদের বাইরের খাবার খেতে নিষেধ করি। তারপর মুখরোচক হওয়ায় বাচ্চারা এসব খাবারে আসক্ত হয়ে পড়ে।”

শহীদ নজমুল হক স্কুলের সামনে আরেক অভিভাবক সাবিনা নাজনিন হেলথ নিউজকে বলেন, “এই খাবারগুলো অস্বাস্থ্যকর জানি, তারপরও আমার বাচ্চাও মাঝে মাঝে খায়। কয়েক দিন আগে তার ডায়রিয়া হয়েছিল চটপটি খেয়ে। তাকে সাবধান করেছি, এ সব খাবার না খেতে।”

রাজশাহী মেডিকেল কলেজের লিভার পরিপাকতন্ত্র ও মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মোহা. হারুন আর-রশীদ হেলথ নিউজকে বলেন, স্কুল-কলেজের সামনে রাস্তার পাশে যে সব খাবারের দোকানে খোলাভাবে রেখে খাবার বিক্রি করা হয়, তা খুবই অস্বাস্থ্যকর ও ঝুঁকিপূর্ণ। এসব খাবার খেয়ে স্কুলের বাচ্চারা বিভিন্ন রকমের অসুখে আক্রান্ত হচ্ছে।

“এই খাবারের কারণে বাচ্চাদের শরীরের মাঝে ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে। যার মাধ্যমে ডায়রিয়া, টাইফয়েড, জন্ডিস, হেপাটাইটিস-এ এবং হেপাটাইটিস- ই ব্যধিতে আক্রান্ত হচ্ছে।”

এসব খাবার খেয়ে বাচ্চারা অসুস্থ হয়ে পড়লে কবিরাজি চিকিৎসা না করে দ্রুত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে বলেছেস ডা. হারুন।

তিনি এ বিষয়ে স্কুলের শিক্ষক এবং অভিভাবকদের সতর্ক হওয়ার পরামর্শও দেন।

রাজশাহী মেডিকেল কলেজের মেডিসিন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডা. মো. খলিলুর রহমান হেলথ নিউজকে বলেন, “এ সকল খাবার বাচ্চাদের জন্য খুব ক্ষতিকর। অভিভাবক এবং স্কুলের শিক্ষকদের এ বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে। অভিভাবকদের এ বিষয়ে গুরুত্ব বাড়াতে হবে যেন রং মেশানো খাবার বাচ্চারা না খায়।”

কলেজিয়েট স্কুলের প্রধান শিক্ষক নূরজাহান বলেন, “আমাদের গেটম্যানকে নির্দেশনা দেওয়া আছে যেন স্কুল কম্পাউন্ডের ভেতরে কেউ এসব খাবার বিক্রি না করে। এ বিষয়ে শিক্ষার্থীদের আরও সচেতন করার বিভিন্ন উদ্যোগও গ্রহণ করা হয়েছে।”

Exit mobile version