Site icon Health News

গুরুত্বপূর্ণ অধিকাংশ হাসপাতাল ‘অগ্নিকাণ্ডের ঝুঁকিতে’

সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অগ্নিকাণ্ডের প্রেক্ষাপটে ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ অধিকাংশ হাসপাতালের অগ্নিকাণ্ডের ঝুঁকিতে থাকার চিত্র বেরিয়ে এসেছে।

ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষকে উদ্ধৃত করে বাংলা দৈনিক কালের কণ্ঠের এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে আশঙ্কার এই চিত্র।

ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আলী আহাম্মেদ খান বলেছেন, ঝুঁকিপূর্ণ হাসপাতালগুলোর তালিকা করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে দেওয়াও হয়েছিল।

সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের এই অগ্নিকাণ্ডকে ইতোমধ্যে ‘ওয়েক আপ কল’ বলেছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।

কালের কণ্ঠের প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৯৫৫ সালে মহাখালীতে নির্মিত জাতীয় বক্ষব্যাধি ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের পুরনো ভবনের বিদ্যুৎ লাইন ব্যবস্থায় হয়নি কোনো সংস্কার। অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা বলতে আছে পুরনো প্রযুক্তির গ্যাস সিলিন্ডার।

তারও আগে নির্মিত দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ চিকিৎসাকেন্দ্র ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মূল ভবনের অবস্থাও একই রকম।

যদিও উভয় হাসপাতালের নতুন ভবনে আধুনিক কিছু প্রযুক্তি যুক্ত করা হয়েছে। তবে একটিতেও নেই নিজস্ব পূর্ণাঙ্গ অগ্নিনির্বাপক ইউনিট, যা নিয়ে ওই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আগে থেকেই উৎকণ্ঠার মধ্যে আছে।

স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, কিডনি হাসপাতাল, মানসিক হাসপাতাল, বাতজ্বর হাসপাতাল, নিটরের পুরনো ভবনসহ আটটি সরকারি হাসপাতালের অবস্থা একই রকম বলে কালের কণ্ঠের প্রতিবেদনে বলা হয়।

সরকারি হাসপাতালই নয়, দেশের নামিদামি চার-পাঁচটি প্রাইভেট হাসপাতাল ছাড়া অন্য প্রাইভেট হাসপাতালেও অগ্নিনির্বাপণের উপযুক্ত কোনো ইউনিট বা ব্যবস্থা নেই।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাসির উদ্দিন কালের কণ্ঠকে বলেছেন, “আগুনের ঝুঁকির বিষয়টি সব সময়ই আমাদের চিন্তার ব্যাপার। পুরনো ভবনে সিলিন্ডার ছাড়া আর কিছু নেই। নতুন ভবনে কিছুটা বাড়তি আধুনিক যন্ত্রপাতি রয়েছে।”

তবে তিনি বলেন, “আমাদের এখানে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত আনসার সদস্যরা আগুন নেভানোর কাজে প্রশিক্ষিত হওয়ায় কয়েকবার আগুনের ঘটনা ঘটলেও দ্রুততম সময়ে তারা তা নিয়ন্ত্রণে কাজ করেছে। তবে এটা কোনো স্থায়ী সমাধান নয়।”

ঢাকাসহ সারা দেশে জেলা ও উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত সরকারি হাসপাতালের সংখ্যা ৬১০টি, যেখানে বেডের সংখ্যা ৪৮ হাজার ৯৩৪। বেসরকারি হাসপাতালের সংখ্যা চার হাজার ৫৯৬টি, যেখানে বেডের সংখ্যা ৭৮ হাজার ৪২৬।

এসব হাসপাতালকে আগুনের ঝুঁকি থেকে রক্ষার বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আলী আহাম্মেদ খান কালের কণ্ঠকে বলেন, “আমরা অনেকভাবে অনেকবার সতর্ক করেছি সব হাসপাতালকে। বেশির ভাগ হাসপাতালের ভবন পুরনো। আমাদের দেশে একটি দুর্ঘটনা না ঘটলে আমরা নড়েচড়ে বসি না।”

তিনি বলেন, ‘প্রতিটি হাসপাতাল, মার্কেট, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ বড় প্রতিষ্ঠানগুলোর উচিত নিজস্ব একটি পূর্ণাঙ্গ ফায়ার ম্যানেজমেন্ট ইউনিট থাকা। নয়ত দুর্ঘটনার পর এই যানজটপূর্ণ শহরে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় আমাদের গাড়ি যেতে যেতে অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়ে যাওয়ার সুযোগ থাকে।’

এদিকে পুরনো ভবন ছাড়া নতুন অনেক হাসপাতাল ভবনেও পর্যাপ্ত অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে না। সম্প্রতি উদ্বোধন করা জাতীয় অর্থোপেডিকস হাসপাতাল ও পুনর্বাসন কেন্দ্রের [(নিটর) সাবেক পঙ্গু হাসপাতাল] অত্যাধুনিক নতুন ভবনে এখনো স্থাপন করা হয়নি অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা।

নিটরের পরিচালক অধ্যাপক ডা. আব্দুল গণি মোল্লাহ কালের কণ্ঠকে বলেন, “আমার হাসপাতালের পুরনো ভবন তো পুরোই অনিরাপদ। কিছু সিলিন্ডার ছাড়া আর কিছুই নেই। নতুন ভবনেও কারিগরি কিছু ঝামেলা আছে। তবে এটা নিয়ে আগামী দু-এক দিনের মধ্যে বৈঠক করব। হাসপাতালে যদি পর্যাপ্ত অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা করা না যায় তবে বিপদের আশঙ্কা থেকেই যায়। কারণ হাসপাতালে রোগীরা থাকে। ঘটনা ঘটলে তাদের দৌড়ে বের হওয়ার উপায় থাকে না।”

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, “সোহরাওয়ার্দীর অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা আমাদের চোখ খুলে দিয়েছে। দেশের বেশির ভাগ হাসপাতালে পর্যাপ্ত অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা নেই, যা এক ধরনের ঝুঁকির কারণ। অনেক হাসপাতাল বহুদিনের পুরনো। এখন আমরা যত দ্রুত সম্ভব সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা করে দেশের সব হাসপাতালে অগ্নিনির্বাপণের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করব।”

Exit mobile version