Site icon Health News

গ্যাসের ওষুধের এত বিক্রি! কেন?

খাওয়ার আগে বা পরে গলায় কিংবা পেটে জ্বলুনি, খেয়ে নেওয়া যাক একটি ‘গ্যাসের ওষুধ’; এই চিত্র এখন প্রতি ঘরের। তাই তো বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি বিক্রিত ওষুধের তালিকায় ওপরের সারিতে এখন অ্যাসিডিটি সমস্যার এই ওষুধগুলো।

আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান আইএমএস হেলথ ও লংকাবাংলা রিসার্চের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭ সালে বাংলাদেশের বাজারে সর্বাধিক বিক্রিত ওষুধের ১০টি ব্র্যান্ড হল- সেকলো, সার্জেল, ম্যাক্সপ্রো, প্যানটোনিক্স, সেফ-৩, মিক্সটার্ড ৩০, লোসেকটিল, নাপা এক্সট্রা, নাপা ও ফিনিক্স।

অর্থাৎ এই ১০টির মধ্যে ছয়টিই গ্যাস্ট্রোনমিক্যাল ওষুধ। ওষুধ শিল্পের গড় প্রবৃদ্ধি ১৯ শতাংশ হলেও গ্যাস্ট্রোনমিক্যালের প্রবৃদ্ধি ২১ দশমিক ৯৫ শতাংশ।

বাংলাদেশে ওষুধ শিল্পের বর্তমান বাজার প্রায় ১৯ হাজার কোটি টাকার। এ বাজারের অর্ধেকই এই ওষুধ দখল করে আছে বলে গবেষকদের তথ্য।

নগরায়ন এবং আর্থিক উন্নতি মানুষের জীবনাচরণে যে পরিবর্তন এনেছে, তার প্রভাবে খাবার গ্রহণ থেকে শুরু করে ঘুমে যে অনিয়ম দেখা দিচ্ছে, তারই ফল হিসেবে অ্যাসিডিটিসহ নানা সমস্যা দেখা দিচ্ছে বলে মনে করা হচ্ছে।

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন, সময়মতো না খাওয়া, ভেজাল খাবার, অতিরিক্ত মসলাযুক্ত খাবার, ধূমপান ও মদ্যপানকে অ্যাসিডিটি সমস্যা বেড়ে যাওয়ার কারণ দেখাচ্ছেন।

সিলেট ওসমানি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক এম কে সুর চৌধুরী হেলথ নিউজকে বলেন, শুধু যে তেলমশলা খাবারই অ্যাসিডিটির জন্য দায়ী তা নয়। মানুষের মধ্যে এখন অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপনের প্রবণতা বেশী। এ কারণে অ্যাসিডিটির মত সমস্যা দিন দিন বাড়ছে।”

গবেষণার তথ্য অনুসারে, গত বছর স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসের ওষুধ সেকলো বিক্রি হয়েছে ৩৭৬ কোটি ৬৫ লাখ ৬০ হাজার টাকার।

তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা হেলথকেয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসের সার্জেলের বিক্রি ছিল ২৯৪ কোটি ৮৪ লাখ টাকার।

তৃতীয় স্থানে থাকা রেনাটা ফার্মার ম্যাক্সপ্রোর বিক্রি ২২৮ কোটি ৩৯ লাখ টাকার। চতুর্থ স্থানে থাকা ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালস তাদের প্যানটোনিক্স বিক্রি করেছে ২১৫ কোটি ৬২ লাখ টাকার।

শীর্ষ তালিকার সপ্তম স্থানে রয়েছে এসকেএফ ফার্মার লোসেকটিল। ২০১৭ সালে এই ওষুধটি বিক্রি হয়েছে ২২২ কোটি ১৬ লাখ টাকার।

দশম স্থানে থাকা অপসোনিন ফার্মার ফিনিক্সের বিক্রি ছিল ১০০ কোটি ১৪ লাখ টাকা।

বিশেষজ্ঞরা আরও বলছেন, চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র ছাড়াই এ ধরনের ওষুধ সেবনের সুযোগ থাকায় মানুষের মধ্যে তা গ্রহণের পরিমাণ বেড়েছে।

বাংলাদেশে ব্যবস্থাপত্র ছাড়াই ওষুধের দোকানে দুই-একটি ছাড়া সব ওষুধ মেলে। ছোটখাটো সমস্যায় সবাই চিকিৎসকের পরামর্শ না নিয়েই ওষুধ খেয়ে নেয়।

এটাও ঠিক নয় বলে চিকিৎসকরা বলছেন। তারা বলছেন, সাধারণ গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ ওমিপ্রাজল এক বছরের বেশি টানা খাওয়া ঠিক নয়।

সাধারণ গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা হলেও নিজের সিদ্ধান্তে ওষুধ না খেয়ে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত বলে মনে করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন অনুষদের ডিন অধ্যাপক এ বি এম আবদুল্লাহ। তিনি বলেন, “কোন আলসারের রোগী যদি সাধারণ গ্যাস্ট্রিক মনে করে দিনের পর দিন একই ওষুধ খেতে থাকেন তাহলে হিতে বিপরীতও হতে পারে। এছাড়া অনেকে আছেন গল ব্লাডার স্টোনের সমস্যায় ভুগছেন কিন্তু খাচ্ছেন গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ।”

গ্যাস্ট্রিকের মতো সমস্যা এড়াতে প্রাত্যহিক জীবন যাত্রায় পরিবর্তন আনা দরকার বলে মনে করেন এ বি এম আবদুল্লাহ।

“অতিরিক্ত তেল মশলা খাবার বাদ দিয়ে খেতে হবে পুষ্টিকর খাবার। সময়ের খাবার সময়েই খেতে হবে। আর যারা ধূমপান করেন তাদের পরিত্যাগ করতে হবে এ অভ্যাস।”

Exit mobile version