Site icon Health News

জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটে ‘কোটেশন বাণিজ্য’র খবর

জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটে কোটেশন প্রক্রিয়ায় কেনাকাটার মাধ্যমে ভুয়া বিল-ভাউচার দেখিয়ে বছরের পর বছর ধরে লুটপাটের খবর দিয়েছে দৈনিক সমকাল।

সংবাদটিতে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন রাজধানীর মহাখালীতে অবস্থিত প্রতিষ্ঠানটির কার্যালয়ে কোটেশনের কাজ করেন স্থানীয় এমন এক ঠিকাদারবে উদ্ধৃত করে এই অভিযোগ করা হয়েছে।

ওই ঠিকদার বলেছেন, নিয়ম অনুযায়ী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চাহিদা অনুযায়ী মালপত্র সরবরাহ করবে। বাস্তবে তা ঘটে না। কোটেশনের মাধ্যমে দুই লাখ টাকার কার্যাদেশ দেওয়া হলে এক লাখ ৭০ হাজার টাকা কর্তৃপক্ষই রেখে দেয়। ওই টাকায় কোনো কাঁচামাল কেনা হয় না। প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক থেকে শুরু করে বিভিন্ন কর্মকর্তা ওই টাকা ভাগ করে নেন।

জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের (আইপিএইচ) প্রয়োজনীয় কোনো কাঁচামাল, রাসায়নিক অথবা দ্রব্যাদি কিনতে টেন্ডার ছাড়াই কোটেশনের মাধ্যমে সর্বোচ্চ দুই লাখ টাকা পর্যন্ত করে ব্যয় করতে পারে কর্তৃপক্ষ। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আইপিএইচ কর্তৃপক্ষ দুই লাখ টাকার কার্যাদেশ দেয়।

সমকালের প্রতিবেতদন অনুযায়ী, কার্যত কোনো কাঁচামাল ও রাসায়নিক কেনা হয় না। কারণ একটি চক্র দুই লাখ টাকার মধ্যে এক লাখ ৭০ হাজার টাকা রেখে দেয়; বাকি ৩০ হাজার টাকা দেওয়া হয় ঠিকাদারকে।

এই কোটেশন বাণিজ্যের কারণে প্রতিষ্ঠানটিতে এখন স্যালাইন উৎপাদন বন্ধ হওয়ার পথে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

স্যালাইন তৈরির বিভিন্ন কাঁচামাল ও কেমিক্যাল বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। কিন্তু দীর্ঘ ছয় মাসেরও বেশি সময় ধরে এই আমদানি না করায় জুলাই মাস পর্যন্ত স্যালাইন উৎপাদন বন্ধ ছিল। তবে অগাস্ট মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে সীমিত পরিসরে উৎপাদন শুরু হয়েছে।

সমকালের অনুসন্ধানে ধরা পড়েছে, চলতি অর্থবছরে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় চিকিৎসা সরঞ্জাম কিনতে জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটকে ২০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়। কিন্তু চলতি বছরের ২৪ মে স্যালাইন, ব্লাড ব্যাগ, ব্লাড ট্রান্সমিশন সেট উৎপাদনের কাঁচামাল কেনার জন্য নৌবাহিনী পরিচালিত ডকইয়ার্ডকে মাত্র দুই কোটি ৫৩ লাখ ছয় হাজার ৫০০ টাকার কার্যাদেশ দেওয়া হয়। অবশিষ্ট অর্থ কোটেশন বাণিজ্যের জন্য রেখে দেওয়া হয়। অভিযোগ, দুই লাখ টাকা করে নগদ কোটেশন বাণিজ্যের জন্য জুন মাসজুড়ে প্রতিষ্ঠানের হিসাব বিভাগ ও স্টোর শাখার কমকর্তা-কর্মচারীদের দিয়ে কাগজপত্র তৈরি করা হয়। বিভিন্ন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নামে দুই লাখ টাকা করে কার্যাদেশ দিয়ে পরিচালক কয়েক কোটি টাকার কোটেশন বিল তোলেন। তবে বিষয়টি জানাজানি হওয়ায় তিনি ‘অব্যয়িত অর্থ’ সরকারি কোষাগারে জমা দেন।

সেনাবাহিনী পরিচালিত প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরি (বিএমটিএফ) দীর্ঘদিন ধরে জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটকে (আইপিএইচ) চাহিদা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় মালপত্র সরবরাহ করে আসছে। কিন্তু বকেয়া বিল পরিশোধ না করায় বিএমটিএফ কর্তৃপক্ষ আইপিএইচকে আর কোনো মাল সরবরাহ করবে না বলে জানিয়েছে। এতে আইপিএইচে সংকট আরও ঘনীভূত হয়েছে।

জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের পরিচালক ডা. আবুল কালাম আজাদ সমকালের জিজ্ঞাসায় বলেছেন, তিনি মাত্র সাড়ে তিন মাস আগে প্রতিষ্ঠানটিতে যোগ দিয়েছেন। আগের পরিচালকরা যথাসময়ে কাঁচামাল না কেনায় সংকটের সৃষ্টি হয়েছে। তিনি যোগদানের পর কাঁচামাল ক্রয়ের কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে। তবে দ্রুত কাঁচামাল কিনতে গিয়ে টেন্ডার প্রক্রিয়া ছাড়াই কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে এবং আগস্ট মাস থেকে সীমিত পরিসরে উৎপাদন শুরু হয়েছে।

কোটেশন বাণিজ্য ও কর্মচারীদের দুর্নীতি বিষয়ে সমকালের প্রশ্নে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

Exit mobile version