বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল সহকারীদের বিরুদ্ধে ব্যাপক অনয়িম ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ উঠেছে।
নিয়ম ও আইন-কানুন না মেনে চেম্বার খুলে নিজেদের চিকিৎসক পরিচয় দিয়ে যেমন রোগী দেখছেন; তেমনি বিভিন্ন ক্লিনিকে অস্ত্রোপচারও করছেন।
চিকিৎসার নামে এই বেআইনি কর্মকাণ্ড বন্ধে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপ চেয়েছেন শরণখোলার উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ও উপজেলা স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি হাসানুজ্জামান পারভেজ।
খবর নিয়ে জানা যায়, শরণখোলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ছয়জন চিকিৎসা সহকারী রয়েছেন। এদের প্রায় সবাই নিজস্ব প্যাড বানিয়ে তাতে নামের আগে ‘ডাক্তার’ লিখে গ্রাম-গঞ্জ থেকে আসা মানুষদের সঙ্গে প্রতারণা করছেন।
কেউ কেউ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রোগী দেখার বিনিময়ে অর্থও নিচ্ছেন বলে স্থানীয়দের অভিযোগ।
চিকিৎসা সহকারী মোর্শেদা আক্তার সুমীর বিরুদ্ধে রোগীদের কাছ হতে দেড়শ থেকে দুশ টাকা ফি নেওয়ার অভিযোগ দীর্ঘদিনের। তিনিসহ তিনজনের নামের আগে ‘ডাক্তার’ লেখা প্যাড দেখতে পাওয়া যায়।
অভিযোগ রয়েছে, এরা বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানির কাছ থেকে সুবিধা নিয়ে তাদের ওষুধই লিখেন। অপ্রয়োজনেও নানা অ্যান্টিবায়েটিক লিখে দিচ্ছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এক কর্মী হেলথ নিউজকে বলেন, “মেডিকেল সহকারীদের মধ্যে কেউ কেউ সকাল ৯টায় এসে অনলাইন হাজিরা দিয়ে হাসপাতালের পাশের তাদের চেম্বারে বসে রোগী দেখেন। কেউ কেউ পাশের ক্লিনিকগুলোতে অপারেশন, ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতে ইসিজি ও আলট্রাসগ্রাম, প্যাথলজিক্যাল টেস্টও করেন।”
চিকিৎসা সহকারী আলসামল জমাদ্দার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সংলগ্ন কয়েকটি ক্লিনিকে নিয়মিত বিভিন্ন অস্ত্রোপচার করে যাচ্ছেন বলে স্থানীয়দের কাছ থেকে তথ্য পাওয়া যায়।
তারা বলছেন, এদের হাতে অস্ত্রোপচারের পর অবস্থার অবনতি ঘটলে অনেক রোগীকে খুলনায় নিয়ে যেতে হচ্ছে। মৃত্যুর ঘটনাও ঘটছে।
মোর্শেদা আক্তার সুমি ও আসলাম স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রোগীর কাছ থেকে ফি নেওয়া, অফিস পাঁকি দিয়ে ব্যক্তিগত চেম্বারে গিয়ে রোগী দেখার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তবে প্যাডে ডাক্তার পরিচয় দেওয়ার বিষয়ে হেলথ নিউজের জিজ্ঞাসায় তারা সদুত্তর দিতে পারেননি।
প্রাক্তন উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. শফিকুল ইসলাম বাবুল হেলথ নিউজকে বলেন, স্বাস্থ্য বিধি অনুযায়ী মেডিকেল সহকারীরা ডাক্তার নন। প্যাড বানিয়ে তাতে ডাক্তার পরিচয় দেওয়া এবং এন্টিবায়োটিক লেখা তাদের এখতিয়ার বহির্ভূত কাজ।
স্বাস্থ্য বিভাগের খুলনা জোনের পরিচালক ডা. সুশান্ত কুমার হেলথ নিউজকে বলেন, “মেডিকেল সহকারীদের ডাক্তার লেখার কোন বিধান নেই। এছাড়া ইসিজি ও আলট্রাসনোগ্রামের ডিপ্লোমা না থাকলে তারা এসব করতে পারবেন না।”
এ বিষয়ে কোন অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেবেন বলে জানান তিনি।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. অসীম কুমার সমাদ্দার হেলথ নিউজকে বলেন, “বর্তমানে হাসপাতালের শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা হয়েছে। তারপরও এ সকল বিষয়ে কারও কাছ থেকে কোনো অভিযোগ পাওয়া গেলে বিধি অনুযায়ী প্রয়োজনী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ও উপজেলা স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি হাসানুজ্জামান হেরথ নিউজকে বলেন, “মেডিকেল সহকারীরা একের পর এক নানাবিধ অনৈতিক কর্মকাণ্ড করে চলছে। এ ব্যাপারে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছি।”