Site icon Health News

‘ডেঙ্গুর মশা নিধনে ঘরবাড়ি পরিচ্ছন্ন রাখুন’

মাত্র দুই মিলিলিটার পানি পেলেও এডিস মশা সেখানে বংশ বিস্তার করতে পারে বলে জানিয়েছেন ডব্লিউএইচওর দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া কার্যালয়ের জ্যেষ্ঠ কীটতত্ত্ববিদ বি এন নাগপাল।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে সাংবাদিকদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় সোমবার তিনি বলেন, ফগার মেশিনে রাস্তা বা উন্মুক্ত জায়গায় কীটনাশক ছিটিয়ে ডেঙ্গু রোগের বাহক এডিস মশা মারার আশা কেবলই ‘মিথ’।

“তার বদলে নিজের ঘরবাড়ি পরিচ্ছন্ন রাখুন এবং সকাল-সন্ধ্যা অ্যারোসল স্প্রে করুন, কারণ এডিস মশা ওখানেই থাকে।”

মশা নিয়ে ৪০ বছর গবেষণা করা বিএন নাগপাল এডিস মশা মারতে ফগিং মেশিনের প্রয়োগ পদ্ধতি নাচক করে দিয়ে বলেন, সবার আগে এ মশার প্রজননস্থল শনাক্ত ও ধ্বংস করার দিকে নজর দিতে হবে।

একটি পানির বোতলের ঢাকনা দেখিয়ে তিনি বলেন, মাত্র দুই মিলিলিটার পানি পেলেও এইডিস মশা সেখানে বংশ বিস্তার করতে পারে।

“এডিস মশা পানির উপরিতলে এমনভাবে ডিম ছাড়ে, যাতে সেগুলো বছরজুড়ে টিকে থাকতে পারে। যখন পাত্র ভরে পানি উপচে পড়ে, তখন সেই ডিম থেকে লার্ভা জন্ম নেয়।”

এডিসকে ‘স্মার্ট মশা’ হিসেবে মন্তব্য করে বি এন নাগপাল বলেন, এ মশা দেয়ালে না বসে টেবিল, বিছানা, সোফা, পর্দা ও ঝুলন্ত কাপড়ের নিচে অন্ধকারে লুকিয়ে থাকে। তাই এসব জায়গায় অ্যারোসল স্প্রে করতে হবে।

“কিন্তু এ মশার প্রজননস্থল চিহ্নিত করাটাই আসল। সাধারণ মানুষের কাছে একটা সহজ বার্তা আমাদের পৌঁছে দিতে হবে। তা হল- আপনার আপনার বাড়ি সপ্তাহে অন্তত এক ঘণ্টা পরিষ্কার করুন।

মানুষের কাছে সঠিক বার্তাটি আমাদের পৌঁছে দিতে হবে কেননা তাদের সক্রিয় না করে এ রোগ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়।”   

সবাই যদি ঠিকঠাক নির্দেশনাগুলো অনুসরণ করে তাহলে দশ দিনের মধ্যে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসা সম্ভব বলে মত দেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এই বিশেষজ্ঞ।

তিনি বলেন, একেক ধরনের মশার বংশবৃদ্ধি আর টিকে থাকার পদ্ধতি একেক রকম। সুতরাং নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রেও ভিন্নভাবে ভাবতে হবে।

মশা মারার ওষুধ প্রয়োগ সঠিকভাবে হচ্ছে কি না- সে বিষয়েও নজর দেওয়ার তাগিদ দেন এই কীটতত্ত্ববিদ।

তিনি বলেন, সঠিক ওষুধ সঠিক মাত্রায় এবং সঠিকভাবে দেওয়া না হলে মশার লার্ভা নষ্ট করতে খুব বেশি সাফল্য পাওয়া যাবে না, বরং তাতে পরিবেশ দূষণ হবে।

“ফগারের মাধ্যমে যে ওষুধ ছিটানো হয়, তাতে ৯৫ শতাংশ ডিজেল বা কেরোসিন থাকে। শ্বাসের সঙ্গে তা আমরা টেনে নিচ্ছি, তাতে শ্বাসতন্ত্র আর হৃদযন্ত্রের জটিলতা তৈরি হচ্ছে। এ কারণে ডব্লিউএইচও ফগিংয়ের পরামর্শ আর দেয় না।”

এডিস মশা উড়ে তিন থেকে চারশ মিটারের বেশি যেতে পারে না; তবে এর লার্ভা পৌঁছে যেতে পারে বহুদূর।

আসন্ন ঈদের মৌসুমে যেহে বহু মানুষ ঢাকা ছেড়ে গ্রামে যাবেন, সেহেতু এডিস মশার অ্যালবোপিকটাস প্রজাতির মাধ্যমে ডেঙ্গুজ্বর আরও বেশি ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন অনেকে।

তবে এর সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে নাগপাল বলেন, এডিস ইজিপ্টাই হচ্ছে ডেঙ্গুজ্বরের মূল বাহক। গ্রামে অ্যালবোপিকটাস থাকলেও তা ডেঙ্গুজ্বরের বিস্তারের জন্য তুলনামূলকভাবে কম দায়ী।

“এটা তেমন শক্তিশালী বাহক নয়; বড়জোর শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ থেকে এক শতাংশ বিস্তার ঘটাতে পারে এই প্রজাতি।”

Exit mobile version