Site icon Health News

তামাক রপ্তানিতে উৎসাহ মুহিতের

রপ্তানি উৎসাহিত করতে প্রক্রিয়াজাত তামাকপণ্য রপ্তানিতে শুল্ক প্রত্যাহারের প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী; যা জনস্বাস্থ্যবিরোধী পদক্ষেপ বলে সমালোচনা এসেছে।

বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে উপস্থাপিত ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেটে তামাকের বিরুদ্ধে নানা কথা বলে দেশে তামাক ব্যবহার কমাতে রপ্তানির পরিকল্পনা নিয়ে আসেন আবুল মাল আবদুল মুহিত।

তিনি প্রক্রিয়াজাত তামাক রপ্তানিতে বিদ্যমান ২৫ শতাংশ শুল্ক প্রত্যাহারের প্রস্তাব করেন।

তার এই প্রস্তাবের সমালোচনা করেছে তামাকবিরোধী সংগঠন প্রজ্ঞা এবং অ্যান্টি টোবাকো মিডিয়া এলায়েন্স- আত্মা। এক বিবৃতিতে তারা বলেছে, এটি ‘অত্যন্ত নিন্দনীয় এবং চরম জনস্বাস্থ্যবিরোধী’ একটি পদক্ষেপ।

“এর ফলে তামাক চাষ বৃদ্ধি পাবে এবং দেশের খাদ্য নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়বে। ২০৪০ সালের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার নির্দেশনা উপেক্ষিত হবে।”

নিজের পরিকল্পনার ব্যাখ্যায় অর্থমন্ত্রী বলেন, শুরু থেকেই সিগারেট শিল্প একটি ‘উত্তম লাভের’ খাত হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে।

“তামাক প্রক্রিয়াজাতপূর্বক রপ্তানি উৎসাহিত করতে তামাকজাত পণ্যের উপর আরোপিত ২৫ শতাংশ রপ্তানি শুল্ক প্রত্যাহারের প্রস্তাব করছি।”

সেই সঙ্গে তিনি দাবি করেন, তামাক একটি কৃষিপণ্য হলেও জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর বিধায় তামাকের উৎপাদনকে সরকার সবসময় নিরুৎসাহিত করে আসছে।

অবশ্য বাজেটে বিভিন্ন তামাক পণ্যের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করে অর্থমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী ২০৪১ সালের মধ্যে দেশ থেকে তামাক নির্মূলের কথা বলে আসছেন। ‘সেই ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে’ ২০৩০ সালের মধ্যে বিড়ি উৎপাদন এবং ২০৪০ সালের মধ্যে সিগারেটের উৎপাদন ‘নি:শেষ করার’ সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।

তার প্রস্তাবে ফিল্টারযুক্ত বিড়ির ক্ষেত্রে ২০ শলাকার প্যাকেটের মূল্য ১২ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৫ টাকা করার কথা বলা হয়েছে।

নিম্নতম মূল্য স্তরের সিগারেটের ১০ শলাকার দাম ২৭ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩২ টাকা বা তার বেশি এবং সম্পূরক শুল্ক ৫২ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৫৫ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।

মধ্যম স্তরে দশ শলাকার সিগারেটের মূল্য ৪৫ টাকা থেকে বেড়ে হবে ৪৮ টাকা; সম্পূরক শুল্ক ৬৩ শতাংশ থেকে বেড়ে ৬৫ শতাংশ হবে।

উচ্চস্তরের দশ শলাকার সিগারেটের দাম ৭০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৭৫ টাকা এবং ৬৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক বহাল রাখার কথা বলা হয়েছে। উচ্চস্তরের ১০ শলাকার যে সিগারেটের দাম এখন ১০১ টাকা, তার দাম ও ৬৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক অপরিবর্তিত থাকবে।

সম্প্রতি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তামাকবিরোধী কনভেনশনের কারণে তামাক শিল্পের ‘মৃত্যুঘণ্টা বেজে গেছে’ বলে মনে করলেও বাংলাদেশে তা ঘটতে আরও অন্তত ২০ বছর লাগবে বলে মনে করেন অর্থমন্ত্রী।

“তাই আমার মনে হয় তামাকের ব্যবহার কমিয়ে আনার উদ্যোগের সঙ্গে দেশীয় উচ্চমানের ব্র্যান্ড প্রতিষ্ঠার কার্যক্রম একসঙ্গে চলতে পারে।”

সেই লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে তিনটি ‘কাজ ও কৌশলের’ কথা বলেছেন অর্থমন্ত্রী।এগুলো হল- ১. নিম্নমানের সিগারেট উৎপাদন দ্রুত বন্ধ করা; ২. মূল্যসীমা নির্বিশেষে এক করহার নির্ধারণ এবং ৩. একটি উন্নত দেশীয় ব্র্যান্ড অন্তত বিশ বছরের জন্য প্রতিষ্ঠা করা।

বিড়ির ভয়াবহতা সিগারেটের চেয়ে বেশি মন্তব্য করে অর্থমন্ত্রী বলেন, “বর্তমান আর্থ সামাজিক উন্নয়নের ফলে বিড়ির ব্যবহারকারী কমে যাচ্ছে। বর্তমানে এ খাতে নিয়োজিত শ্রমিকের সংখ্যাও পূর্বের তুলনায় কম।”

অন্যদিকে জর্দা ও গুল স্বাস্থ্যের জন্য বিড়ি-সিগারেটের মতই ভয়াবহ মন্তব্য করে মুহিত বলেন, “তাই জর্দা ও গুলের ওজনভিত্তিক মূল্য নির্ধারণ করার সুপারিশ করছি। এক্ষেত্রে প্রতি দশ গ্রাম জর্দা ও গুলের ন্যূনতম মূল্য  নির্ধারণ করার প্রস্তাব করছি ২৫ টাকা। যেখানে সম্পূরক শুল্ক হবে ৬৫ শতাংশ।”

তবে মুহিত তামাক নিয়ন্ত্রণের যে পরিকল্পনা নতুন অর্থবছরের বাজেটে উপস্থাপন করেছেন, তা ‘যথেষ্ট’ বলে মনে করছে না প্রজ্ঞা ও আত্মা।

বিবৃতিতে তারা বলেছে, সরকার উচ্চস্তরের (দশ শলাকা ১০১ টাকা) সিগারেটের দাম ও সম্পূরক শুল্প গত তিন বছর ধরে অপরিবর্তিত রাখার মাধ্যমে বহুজাতিক তামাক কোম্পানিগুলোর ব্যবসা সম্প্রসারণের সুযোগ দিয়ে যাচ্ছে।

পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য তুলে ধরে বিবৃতিতে বলা হয়, ২০১৫-১৬ সালের তুলনায় ২০১৭-১৮ সালে জাতীয় মাথাপিছু আয় বেড়েছে ২৪.৬৪ শতাংশ। অথচ এই একই সময়ে এই উচ্চস্তরের সিগারেটের দাম না বাড়ায় এর প্রকৃত মূল্য কমে যাওয়ার পাশাপাশি সরকারও বাড়তি রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

তবে ধোঁয়াবিহীন তামাকপণ্যে জর্দা গুলের ওপর কর বাড়ানোর প্রস্তাব করায় অর্থমন্ত্রীর প্রশংসা করেছে সংগঠন দুটি।

Exit mobile version