Site icon Health News

দেশে চিকিৎসায় আস্থার অভাব?

সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে বড় বড় হাসপাতাল তৈরি হলেও দেশে চিকিৎসা সেবার উপর এখন আস্থা রাখতে পারছে না মানুষ; যে কারণে সামর্থ্য থাকলে ছুটে যাচ্ছে বিদেশে।

এই আস্থাহীনতার মূল কারণ হিসেবে নাগরিকরা বলছেন, দেশে চিকিৎসা ব্যবস্থা উন্নতমানের তো নয়ই, যতটুকু আছে তাতেও রোগীদের আস্থায় আনার মতো পরিবেশ নেই। পাশাপাশি রয়েছে দক্ষ চিকিৎসকের অভাব।

আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়া এবং উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ায় এই বিষয়টি আবার সামনে এসেছে।

গত রোববার ভোরে অসুস্থবোধ করলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয় এই মন্ত্রীকে। দিনভর জীবন সঙ্কটে ছিলেন তিনি। তার হৃদপিণ্ডের রক্তনালীর তিনটি ব্লকের একটি অপসারণ করা গেলেও বাকি দুটি রয়েই গেছে। বিদেশে নেওয়া ঝুঁকিপূর্ণ মনে হওয়ায় সিঙ্গাপুর থেকে আনা হয় চিকিৎসক। পরে ভারত থেকে আনা হয় প্রখ্যাত কার্ডিয়াক সার্জন দেবী প্রসাদ শেঠীকে। তার পরামর্শে সোমবার বিকালে ওবায়দুল কাদেরকে নেওয়া হয় সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজোবেথ হাসপাতালে।

শুধু ওবায়দুল কাদেরই নয়, সামর্থ্য যাদের রয়েছে, তাদের চিকিৎসা নিতে বিদেশ পাড়ি জমাতে দেখা যায় অহরহ।

এ বিষয়ে স্থানয় সরকার বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমেদ হেলথ নিউজকে বলেন, দেশে উন্নত চিকিৎসার পরিবেশ এখনও নেই।

নিজের অভিজ্ঞতা থেকে তিনি বলেন, “অনেক ক্ষেত্রে ডাক্তার থাকলেও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি নেই। আবার অনেক ক্ষেত্রে যন্ত্রপাতি আছে তো ডাক্তার নেই। আর সবচেয়ে বড় বিষয় এত রোগী যে ভালো ডাক্তার থাকলেও এখানে উন্নত চিকিৎসা সেবা কঠিন।”

এসব কারণেই মানুষ উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশ যাচ্ছে বলেই মত তোফায়েল আহমেদের।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা এম হাফিজউদ্দিন খান ১৯৯৫ সালে হার্ট অ্যাটাকের পর চিকিৎসা নিতে গিয়েছিলেন সিঙ্গাপুর। তখন দেশে হদরোগের চিকিৎসা একবারেই ভালো ছিল না। কিন্তু এখন সময় একটু হলেও বদলেছে বলে দেশেই চিকিৎসা নেন তিনি।

হাফিজউদ্দিন হেলথ নিউজকে বলেন, “দেশে একের পর এক মেডিকেল কলেজ, হাসপাতাল হচ্ছে। কিন্তু সেই তুলনায় দক্ষ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নেই। যারা পড়াশোনা শেষে নতুন ডাক্তার হিসেবে যোগ দিচ্ছেন, তাদের মান নিয়েও নানা প্রশ্ন আছে।”

তাই দেশে উন্নত চিকিৎসা নিতে বেশিরভাগই আস্থা পায় না বলে মনে করেন তিনি।

পাশাপাশি তিনি বলেন, “দেশে বেশ কিছু ভালো হাসপাতাল আছে। তবে সেখানেও এখন এত এত রোগী যে ডাক্তারের সিরিয়াল পেতেই এক-দুই মাস লেগে যায়।”

তোফায়েল ও হাফিজউদ্দিন দুজনই সরকারি হাসপাতালের অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ ও দুর্ভোগ-বিড়ম্বনার কথা বলেন।

দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থা নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেন নাগরিক সংগঠন সুজনের সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার।

বেসরকারি একটি বড় হাসপাতালে নিজের শাশুড়ির চিকিৎসার অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে তিনি হেলথ নিউজকে বলেন, সেখানেও চিকিৎসকদের মধ্যে জবাবদিহিতা কম। কিভাবে রোগীর বিল বাড়ানো যায়, সে দিকেই যেন বেশি মনোযোগ। এসব হাসপাতাল থেকে রোগী ছাড়ানোও কঠিন।

কদিন আগে স্ত্রীকে ব্যাংককে চিকিৎসা করাতে নিয়ে গিয়েছিলেন বদিউল আলম। তিনি বলেন, “সেখানে অনেক বাংলাদেশি রোগীর সঙ্গে দেখা হয়। সবারই দেশে দুর্ভোগ-বিড়ম্বনা আর হয়রানির অভিজ্ঞতা। দেশের পুরো চিকিৎসা ব্যবস্থায় অসুস্থ। পুরো ব্যবস্থারই চিকিৎসা দরকার।”

দেশে চিকিৎসা ব্যবস্থায় মানুষের আস্থা ফেরাতে সরকারের পক্ষ থেকে জরুরি পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন বলে মত দিয়েছেন এই নাগরিকরা।

Exit mobile version