Site icon Health News

পৃথিবীর ৯ লাখ ৬৯ হাজার মানুষ মারা গেলেন

কোনো যুদ্ধ বিগ্রহে নয়, না দেখা এক নতুন ঘাতকের কাছে পৃথিবীর ৯ লাখ ৬৯ হাজার মানুষ হেরে গেলেন। জীবন দিয়েই পরাজিত হলেন করোনাভাইরাস নামের এক অদৃশ্য শক্তির কাছে । আর এর মধ্যে ২ লাখ-ই বিশ্বের প্রবল প্রযুক্তি ও পরাশক্তির দাবিদার আমেরিকার মানুষ।

আর সব মিলিয়ে সারা বিশ্বে এ মুহুর্তে এ ভাইরাসে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা ৩ কোটি ১৫ লাখ।

আক্রান্তের সবশেষ হিসেবে বিশ্বে শীর্ষ ২ দেশের মধ্যে ঢুকে পড়েছে প্রতিবেশী ভারতের নাম। এ তালিকায় ২০ টি দেশের একটি এখন বাংলাদেশও।

গত ১০ এপ্রিল বিশ্বে মৃতের তালিকায় ১ লাখ মানুষের নাম উঠেছিল। এর ঠিক ১৫ দিনের মাথায় ২৫ এপ্রিল বাংলাদেশ সময় রাত ৯টা ৫৫ মিনিটে ২ লাখ মানুষের মৃত্যুর সংখ্যা জানায় যুক্তরাষ্ট্রের জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের করোনা মিটার। ঘড়ির কাটার তালে মৃত্যু বেড়েছে। হাহাকার থামেনি কোনো এক দিন বা গভীর রাতের মুহুর্তেও।

অপরিচিত ও নতুন এ ঘাতকের কাছে মাত্র ৬ মাসেই বিপুল সংখ্যক মানুষের এ পরাজয় ঘটেছে এক অদৃশ্য লড়াইয়ে। কোনো একটি বিশেষ দেশের মানুষ নন, পৃথিবীর ২১০ দেশ ও অঞ্চলে বিদ্যা-বুদ্ধি-প্রযুক্তির সবার উপরে থাকা দেশগুলোই মৃতের এ তালিকায়, সবার উপরে থেকেই নিজেদের নামগুলো ভাগ করে নিয়েছে। এবং পৃথিবীর আর কোনো প্রাণী নয়, এই ঘাতকের মুল আঘাত এসেছে শুধু মানুষের উপর-ই।

ভাইরাসটির উৎপত্তি চীনে হলেও বর্তমান পৃথিবীর সবচাইতে পরাক্রমশালী দেশ যুক্তরাষ্ট্র এখন আক্রান্ত আর মৃত্যুর তালিকায় সবার উপরে ২ লাখ ৪ হাজার ৫০৬ জন।

এদিকে প্রতিবেশী দেশ ভারতে এ ভাইরাসে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৮৮ হাজার ৯৯৫ এ। ৫৫ লাখ ৬২ হাজারের বেশি দেহে করোনভাইরাস শনাক্ত হয়েছে বলেও জানিয়েছে দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। ইরানে ২৪ হাজার ৪৭৮ জন মারা গেছেন।

নি:শেষ হবার এ তালিকায় আলোড়ন তোলা ইউরোপের অন্যতম প্রাচীন দেশ ইতালিতে মারা গেছেন ৩৪ হাজার মানুষ। তারপর স্পেন ২৮ হাজার ও ফ্রান্স ২৯ হাজার ৮৭৫ জন। পিছিয়ে থাকেনি বেলজিয়াম, জার্মানি, নেদারল্যান্ড, সুইডেন, সুইজারল্যান্ডের মতো সর্বাধুনিক উন্নত দেশগুলো।

নানারকম প্রচেষ্টায় পৃথিবীর দেশগুলো একে অপরের থেকে, দেশে দেশে মানুষ মানুষ থেকে বিচ্ছিন্ন হলেও বিশ্বে করোনাভাইরাস আক্রান্ত মানুষের সংখ্যায় তার গতি কমায়নি। এখনো ২৪ ঘন্টায় আক্রান্ত হয় বিশ্বের লাখ মানুষ, এখনো ২৪ ঘন্টায় কোনো দেশে মারা পড়ছে হাজারের বেশি মানুষ। আবার আক্রান্ত বিপুল মানুষের অনেকের অবস্থা ভালো, সুস্থ হয়ে চলেছেন বাড়ির পথে।

ব্রাজিলের গভীর বনাঞ্চল আমাজনের আদিবাসী তরুন থেকে শুরু করে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন, প্রিন্স চার্লসও এ ভাইরাসে আক্রান্ত হন। আতঙ্কে শরীরের বিশেষ নমুনা পরীক্ষা করতে বাধ্য হন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনও।

করোনাভাইরাসে প্রথমে চীনে, তারপর হংকং, ফিলিপাইন্স ও জাপানে মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। ইউরোপে প্রথম ব্যক্তি মারা যান গত ১৫ ফেব্রুয়ারি। এরপর প্রথমে সময় নিয়ে পরে তীব্র আঘাতে তা কুপোকাত করে আধুনিক ইউরোপকেই।

গত ৮ মার্চ বাংলাদেশে প্রথম শনাক্তের পর ১৮ মার্চ এ ভাইরাসে প্রথম মৃত্যুর আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসে। অবশ্য দেশে এখন মৃত্যুর তালিকায় ৫ হাজার জনের নাম যুক্ত হয়ে গেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের করোনা মিটারে একটু তাকিয়ে থাকলেই আক্রান্ত ২শ ১০ টি দেশ ও অঞ্চলের কোনো না কোনো জায়গা থেকে এসে সংখ্যা আবার বাড়িয়ে তুলছে।

আক্রান্ত ও মৃত্যুর কাটা অনবরত ঘুরছেই। অবশ্য করোনা মিটার বলছে, এ পর্যন্ত সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ২কোটি ৩১ লাখের বেশি।

এদিকে, সবশেষ হিসেবে করোনাভাইরাসে যুক্তরাষ্ট্রে ২শ ৯৫ জনের বেশিসহ সারাবিশ্বে প্রায় হাজার বাংলাদেশী মারা গেছেন।

এদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা  সব দেশের সরকারকে তার জনগনকে মাস্ক পড়তে উৎসাহিত করার পরামর্শ দিয়েছে। তবে জুনের শুরুতে সংস্থাটির পরিচালক ট্রেড্রোস ঘেব্রেয়েসাস এও বলেছেন, শুধু মাস্ক কোভিড-১৯ থেকে কাউকে সুরক্ষিত করবে না।

গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর প্রথম চীনের উহান প্রদেশে এ ভাইরাসটি চিহিৃত হয়। এরপর ধীরে ধীরে তা পৃথিবীর মানুষের জীবনচিত্র নির্মমভাবেই বদলে দিয়েছে।

Exit mobile version