Site icon Health News

রাইফার মৃত্যু: চট্টগ্রামে মুখোমুখি সাংবাদিক-চিকিৎসক

বেসরকারি একটি হাসপাতালে শিশু রাইফার মৃত্যুকে কেন্দ্র করে মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছে চট্টগ্রামের সাংবাদিক ও চিকিৎসক নেতারা। 

সাংবাদিকের মেয়ের মৃত্যুর জন্য দায়ী চিকিৎসকদের শাস্তির দাবি সাংবাদিকরা তোলার পর চেম্বার ও বেসরকারি ক্লিনিকে সাংবাদিকদের চিকিৎসা বন্ধের হুমকি দিয়েছেন চিকিৎসকরা।

গলা ব্যথা নিয়ে গত বৃহস্পতিবার বিকালে বন্দর নগরীর মেহেদীবাগের বেসরকারি ম্যাক্স হাসপাতালে ভর্তি হওয়া দৈনিক সমকালের সিনিয়র রিপোর্টার রুবেল খানের আড়াই বছর বয়সী শিশুকন্যা রাইফা শুক্রবার রাতে মারা যায়।

অভিযোগ ওঠেছে, চিকিৎসক ও কতর্ব্যরত চিকিৎসক ও নার্সদের অবহেলার কারণে এ ঘটনা ঘটেছে।

এর বিরুদ্ধে চট্টগ্রামের সাংবাদিকদের বিক্ষোভের মুখে পুলিশ ওই হাসপাতালের ডিউটি চিকিৎসক ও নার্সকে থানায় নিয়ে গিয়ে ছিল।

রাতে চট্টগ্রামের বিএমএ চট্টগ্রাম শাখার সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল ইকবাল চৌধুরী সেখানে গিয়ে  চিকিৎসক ও নার্সকে ছাড়িয়ে আনেন। তিনি সাংবাদিক ও সিইউজে নেতাদের সঙ্গে অশোভন আচরণ করেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

‘রাইফাকে হত্যা করা হয়েছে’ এ অভিযোগ তুলে গত দুদিন ধরে চট্টগ্রামের সাংবাদিক সংগঠনগুলো আন্দোলন এবং দায়ীদের বিচার দাবি করে আসছে।

তার পাল্টায় সোমবার চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রধান ফটকে বিএমএ চট্টগ্রাম শাখা সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সমাবেশ ডাকে।

সমাবেশে ফয়সাল ইকবাল চিকিৎসকদের উদ্দেশে বলেন, “সাংবাদিকরা অপপ্রচার বন্ধ না করলে কোনো বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের চেম্বার ও বেসরকারি ক্লিনিকে চিকিৎসা না দিয়ে তাদেরকে সরকারি হাসপাতালে পাঠিয়ে দেবেন।”

বেলা সোয়া ১২টা থেকে সোয়া ২টা পর্যন্ত সড়কে এ সমাবেশে চট্টগ্রাম মেডিকেলের চিকিৎসক ছাড়াও বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক ও বেসরকারি মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা অংশ নেন।

বিএমএ নেতার সঙ্গে সাংবাদিকরা অশোভন আচরণ করেছেন বলেও সমাবেশ থেকে অভিযোগ করা হয়।

রাইফার মৃত্যুর পর দুই নার্স ও এক চিকিৎসককে থানায় নিয়ে যাওয়ার প্রসঙ্গ তুলে ডা. ইকবাল বলেন, “আমাদের অনেক বন্ধু ও আত্মীয় সাংবাদিক আছে। সেদিন আমি থানায় গিয়ে সাংবাদিকদের সাথে কোনো কথা বলিনি।

“আমি ওসির কাছে জানতে চেয়েছি কোনো অভিযোগ ছাড়া কেন তাদের থানায় ধরে নিয়ে এসেছে। এটা যদি অপরাধ হয়ে থাকে তাহলে আমি এ অপরাধ বারবার করতে রাজি আছি।”

চিকিৎসককে থানায় নিয়ে যাওয়ায় চকবাজার থানার ওসি আবুল কালামের প্রত্যাহারও দাবি করেন ফয়সাল।

সাংবাদিকদের ‘কলম সন্ত্রাসী’ আখ্যায়িত করে তিনি বলেন, কিছু সাংবাদিক পুরানো একটি নিউজ ফেইসবুকে তুলে এনেছেন। এটা আইসিটি আইনে অপরাধ। এজন্য বিএমএর পক্ষ থেকে আইনজীবীর সাথে কথা বলা হয়েছে।

“সাংবাদিকরা যদি এই অপপ্রচার বন্ধ না করেন তাহলে আপনাদের সাথে আমাদের যে মধুর সম্পর্ক তা বজায় রাখতে পারব কিনা সন্দিহান।”

সাংবাদিকরা তার মাধ্যমে চিকিৎসকের কাছ থেকে সুবিধা গ্রহণ করেন দাবি করে ফয়সাল বলেন, “আপনারা যদি আমার বিরুদ্ধে পোস্টিং বাণিজ্যের কথা বলেন নানা ধরনের অভিযোগ করেন..আপনারা আমার বন্ধু, আপনারা যদি আমাদের সাথে সুসম্পর্ক নষ্ট করেন তাহলে চট্টগ্রামের বেসরকারি হাসপাতাল ও ব্যক্তিগত চেম্বারে আপনাদের চিকিৎসা দিতে অপারগতা প্রকাশ করতে বাধ্য হব।”

বিএমএ চট্টগ্রাম শাখার সভাপতি মুজিবল খানের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের আহ্বায়ক নাসির উদ্দিন মাহমুদ, বিএমএর যুগ্ম সম্পাদক রবিউল করিম, কোষাধ্যক্ষ আরিফুল আমিন, গাইনি বিভাগের প্রধান শাহানার, নবজাতক বিভাগের প্রধান জগদ্বীশ দাশ, শিশু বিশেষজ্ঞ সুভাষ সূত্রধর, বেসরকারি ক্লিনিক মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম, মেডিকেল কলেজ ছাত্রলীগ, ছাত্র সংসদ, ইন্টার্ন চিকিৎক ও বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালের প্রতিনিধিরা।

এদিকে রাইফার মৃত্যু এবং সাংবাদিকদের সঙ্গে ‘অশোভন আচরণকারী’ ফয়সাল ইকবালের বিচার চেয়ে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব চত্বরে প্রতিবাদ সমাবেশ করে চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়ন।

সভাপতি নাজিমুদ্দিন শ্যামলের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বিএফইউজের সহ-সভাপতি শহীদুল আলম, সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক হাসান ফেরদৌস, চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শুকলাল দাশ প্রমুখ।

রাইফার মৃত্যুর ঘটনায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি ইতোমধ্যে গঠন করা হয়েছে। রোববার রাতে গঠিত তদন্ত কমিটির প্রধান স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিক) কাজী মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেছেন, বেসরকারি ম্যাক্স হাসপাতালের লাইসেন্সের ত্রুটি আছে এবং অচিরেই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Exit mobile version