Site icon Health News

রাজশাহীর ডেঙ্গু ঢাকা থেকে!

ঢাকা ছাড়িয়ে রাজশাহীতেও দেখা দিয়েছে মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব।

গত সপ্তাহে রাজশাহী মেডিকেল কলেজের চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মেডিসিন বিভাগের ইউনিটের ওয়ার্ডগুলোতে ডেঙ্গু আক্রান্ত অনেক রোগী ভর্তি আছেন।

কয়েক মাস ধরে ঢাকায় ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব থাকলেও রাজশাহীতে ডেঙ্গুর কোনো লক্ষণ দেখা যায়নি। কিন্তু হঠাৎ করেই গত তিন মাস থেকে রাজশাহীতে ডেঙ্গুর দেখা মিলেছে। সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছে গত সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসে। আক্রান্ত রোগীরা রাজশাহীর সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতাল গুলোতে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

রামেকের মেডিসিন বিভাগের ৪ নম্বর ইউনিটে কর্মরতদের তথ্য অনুযায়ী, গত তিন মাসে এই ইউনিটে ১০ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী ভর্তি হয়েছে। এর মধ্যে ৮ জন পুরুষ ও ২ জন নারী।

রামেকের সব ইউনিট মিলে তিন মাসে প্রায় ৫০ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হন। অর্থাৎ প্রতিমাসে ১৮ থেকে ২০ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন। বেসরকারি চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যার কোনো হিসেব জানা যায়নি।

চিকিৎসকরা বলেন, গত কোরবানির ঈদের সময় ঢাকা থেকে আসা অনেকেই ডেঙ্গু ভাইরাসে আক্রান্ত ছিলেন। তারা ঢাকাতেই আক্রান্ত হয়ে রাজশাহীতে ঈদ করতে এসে চিকিৎসা নিয়েছেন। তাদের মাধ্যমে এবার রাজশাহীতে ডেঙ্গুর ব্যতিক্রমী প্রাদুর্ভাব দেখা যাচ্ছে।

আক্রান্ত একাধিক রোগীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাদের স্বজনদের মধ্যে কেউ কেউ ঢাকা থেকে আক্রান্ত হয়ে রাজশাহীতে এসে চিকিৎসা নিয়েছিলেন।

চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রতি ১০ জন আক্রান্ত রোগীর মধ্যে ৬ জন ঢাকা থেকে আক্রান্ত হয়েছেন। আর রাজশাহীতে আক্রান্ত হয়েছে ৪ জন।

ডেঙ্গু আক্রান্ত গোদাগাড়ীর বাসিন্দা রবিউল ইসলাম হেলথ নিউজকে বলেন, ঢাকা থেকে তিনি আক্রান্ত হয়ে রাজশাহীতে চিকিৎসা নেন।

নগরীর সাহেববাজারের একটি মেসের বাসিন্দা ইমরুল কায়েস হেলথ নিউজকে বলেন, দিনের বেলায় দুই-একদিন তিনি মশার কামড় খেয়েছিলেন, তার কয়েকদিন পরেই তার জ্বর আসে। রামেক হাসপাতালে ভর্তি হলে ডেঙ্গু ভাইরাস ধরা পড়ে।

আক্রান্ত আরেকজন মিজানুর রহমান হেলথ নিউজকে বলেন, তিনি চাঁপাইনবাবগঞ্জে ব্যাংকে চাকরি করেন। সেখানে দিনের বেলায় কামড় খেয়ে কয়েকদিন পরে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে রাজশাহীতে চিকিৎসা নেন।

ডেঙ্গু প্রতিরোধে প্রতিরোধের উপরই জোর দিচ্ছেন চিকিৎসকরা; আক্রান্তদের প্যারাসিটামল বাদে অন্য কোনো ওষুধ না খাওয়ার পরামর্শও দিয়েছেন তারা।

রাজশাহী মেডিকেল কলেজের মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান বাদশাহ হেলথ নিউজকে বলেন, ডেঙ্গুর ভাইরাসবাহী এডিস মশা স্থির ও স্বচ্ছ পানিতে বংশবৃদ্ধি করে। এই মশা সাধারণত দিনের বেলায় কামড়ায়।

ডেঙ্গু প্রতিরোধে তিনি বাসাবাড়ির আশপাশ পরিষ্কার রাখার পরামর্শ দেন। ঢাকা থেকে যে সব বাস-ট্রাক বা ট্রেন আসে, সেগুলোতে ওষুধ ছিটানোর উপর জোর দেন তিনি, যেন ওই মশাগুলোকে সেখানেই মারা যায়। তবে অধ্যাপক বাদশাহ বলেন, “এ বিষয়ে চিন্তিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। রাজশাহীতে এই মশা তেমনভাবে বংশবিস্তার করতে পারে না। সবাই একটু সচেতন থাকলে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা নেই।”

এ বিষয়ে রাজশাহী সিভিল সার্জেন সনজিত কুমার সাহা হেলথ নিউজকে বলেন, “ঢাকায় ডেঙ্গুর প্রকোপ দেখার পরে আমরা রাজশাহীতে  সতর্কতার বিষয়ে জনসাধারণকে বিভিন্ন ভাবে দিকনির্দেশনা দিয়েছি।

“রাজশাহীতে ডেঙ্গুর তেমন প্রকোপ ছিল না। এখন কিছুটা হলেও স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে সর্বোচ্চভাবে ডেঙ্গু প্রতিরোধে চেষ্টা করব।”

Exit mobile version