লিভার সংক্রান্ত জটিলতার রোগী বাড়লেও সে অনুযায়ী রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শয্যা সংখ্যা বাড়েনি। ফলে চিকিৎসাসেবা দিতে গিয়ে সমস্যার মুখে পড়তে হয় চিকিৎসকদের।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের লিভার বিভাগের তথ্য মতে, ২০১১ সালের আদম শুমারি অনুয়ায়ী রাজশাহীর ২৩ লাখ ৭৭ হাজার ৩১৪ জন মানুষের মাঝে ১০ ভাগ মানুষ লিভারের রোগে আক্রান্ত।
অথচ রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে হেপাটোলজি বিভাগে একজন সহকারী অধ্যাপক রয়েছে। আর একজন আইএমও মেডিকেল অফিসার রয়েছে। হেপাটোলজিতে মোট চিকিৎসক রয়েছেন তিনজন, গ্যাস্ট্রোএন্টোরোলজিতে অধ্যাপক রয়েছে চারজন।
রামেক হাসপাতালে লিভারের বেড সংখ্যা মাত্র ১০টি। জায়গা না থাকায় বাকি রোগীদের রাখা হয় হাসপাতালের মেঝেতে।
লিভার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন ওয়ার্ডে বিভিন্ন রোগ নিয়ে যে সব রোগী ভর্তি হয়, তার ১০-১২ ভাগ রোগী লিভার রোগে আক্রান্ত।
তারা জানান, প্রতিদিন ৫০০ রোগী ভর্তি হলে তার মাঝে ৫০ জন রোগী লিভারের রোগী। প্রতি বছর এখানে লিভারে আক্রান্ত রোগী ছয় হাজারের বেশি।
লিভার চিকিৎসার সরঞ্জাম অপ্রতুল কি না- জানতে চাইলে কর্তব্যরত এক চিকিৎসক হেলথ নিউজকে বলেন, “আমাদের এন্ডোসকপি-কোলনোসকপির সুবিধা রয়েছে। তবে সেটা অপ্রতুল। যেভাবে সকল মেশিনপত্র আমাদের পাওয়া দরকার, সেটা সবসময় থাকে না। আর যা রয়েছে সেটা একবার খারাপ হলে ভালো করতে অনেক সময় লেগে যায়।”
রোগীর চাপের কথা স্বীকার করেন রাজশাহী মেডিকেল কলেজের লিভার বিভাগের প্রধান ডা. হারুন আর রশীদও।
তিনি হেলথ নিউজকে বলেন, “গবেষণা করে দেখা গেছে, প্রায় সব মেডিকেল কলেজে হাসপাতালের ইনডোরে যারা ভর্তি থাকে, শতকরা ১০ ভাগ রোগী লিভার রোগের জন্যে ভর্তি হয়।”
দিন দিন লিভার রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধির বিষয়ে তিনি বলেন, মানুষের চিকিৎসা নিয়ে অসচেতনতা, মাদকের প্রসার এবং মানুষের খাদ্যাভ্যাসের কারণে এই সমস্যা বাড়ছে।
“বেশির ভাগ সময়ে মানুষ অসচেতন হয়ে যেখানে সেখানে অস্বাস্থ্যকর খাবার এবং পানি খাচ্ছে। এই খাবারের সাথে সাথে ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ছে।”
অধ্যাপক হারুন বলেন, “আমাদের দেশের মূল সমস্য হেপাটাইটিস-বি ভাইরাস এবং হেপাটাইটিস-সি ভাইরাস, এই সমস্যা একটা বড় রকমের সমস্যা। এই দুই ভাইরাসের শেষ পরিণতি হয় লিভার সিরোসিস কিংবা লিভার ক্যান্সার।
“হয়ত আমরা কিছুদিনের জন্য রোগীকে চিকিৎসা দিয়ে সুস্থ রাখার চেষ্টা করি। কিন্তু এই সকল রোগীকে একেবারে সুস্থ করা যায় না। সাধারণত কোন মানুষের শরীরে যদি হেপাটাইটিস-বি এবং সি ভাইরাস প্রবেশ করে যায়, এটা কোনো কোনো ক্ষেত্রে ১৫ থেকে ২০ বছর আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে ২০ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে সিরোসিস কিংবা ক্যান্সার হয়।”
তিনি জানান, এটা সাধারণত রক্তের মাধ্যমে ছড়ায়, নারী-পুরুষের দৈহিক মিলনের মাধ্যমে ছড়ায়, মা থেকে সন্তান এবং একটি পরিবারের বিভিন্ন সদস্যের মাঝে এই রোগ ছড়িয়ে যেতে পারে। তাছাড়াও সুচ-সিরিঞ্জের মাধ্যমেও ছড়াতে পারে।