Site icon Health News

রোগী নিয়ে হিমশিম খাচ্ছে ক্যান্সার হাসপাতাল

মরণব্যাধি ক্যান্সারের অন্যতম চিকিৎসা রেডিওথেরাপি। সেই কক্ষের সামনেই প্রায় ২৫০ রোগীর লম্বা লাইন।

এরা সবাই ক্যান্সারে আক্রান্ত। বেশিরভাগেরই দাঁড়িয়ে থাকার মতো শারীরিক সক্ষমতা নেই। অনেকে শুয়ে পড়েছেন মেঝেতে। এই রোগীদের নিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন রেডিওথেরাপি বিভাগে ১১ জন কর্মী।

এটা ক্যান্সারের চিকিৎসায় দেশের সবচেয়ে বড় বিশেষায়িত হাসপাতাল রাজধানী ঢাকার মহাখালীর জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের চিত্র।

সরেজমিনে সম্প্রতি হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেল এই করুণ দশা। হাসপাতালে আধুনিক সব যন্ত্রপাতি থাকলেও জনবলের অভাব প্রকট। যে কারণে রোগীদের চাপ সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। ভোগান্তিও পোহাতে হচ্ছে রোগীদের।

গাইবান্ধা থেকে ক্যান্সারাক্রান্ত বাবাকে নিয়ে এসেছেন ছেলে কামরুজ্জামান। মেঝেতে বাবাকে রেখে চোখ ছলছল সন্তানের।

কামরুজ্জামান হেলথ নিউজকে বলেন, চিকিৎসা নিতে দুই-তিন সপ্তাহ পরপর বাবাকে নিয়ে আসতে হয় ঢাকায়। কিন্তু লম্বা লাইনে অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন তার বাবা। বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়ার সামর্থ্য নেই বলে সরকারি এই হাসপাতালই তাদের ভরসা।

জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মোয়াররফ হোসেন হেলথ নিউজকে জানান, প্রতিদিন এই হাসপাতালে ৫০০ থেকে ৫৫০ জন রোগী রেডিওথেরাপি পেয়ে থাকে। রেডিওথেরাপি কোর্স শেষ করতে ছয় সপ্তাহ সময় লাগে। আর একজনের পুরো কোর্স শেষ না হলে নতুন রোগী নেওয়া যায় না।

তিনি বলেন, “এর মধ্যেও প্রতিদিন ২০ থেকে ৩০ জন করে রোগীর জন্য সুপারিশ থাকে। সবমিলিয়ে আমাদের হিমশিম খাওয়ার অবস্থা। আর সে কারণেই নতুন কোনো রোগী রেডিওথেরাপি নিতে এলে তাকে দুই মাস-তিন মাস পরে আসতে বলা হচ্ছে।”

পরিচালক আরও জানান, যারা মেশিন সরবরাহ করেছে তাদের হিসাবে প্রতিদিন একটি মেশিনে ৬০ জনকে রেডিওথেরাপি দেওয়া যায়। কিন্তু অতিরিক্ত রোগীর চাপে ক্যান্সার হাসপাতালে একটি মেশিনে দিনে কমপক্ষে ১০০ রোগীকে রেডিওথেরাপি দেওয়া হচ্ছে।

তিনি বলেন, “যেসব মেশিন আছে, তাতে এর বেশি কোনোভাবেই চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব নয়। পৃথিবীর কোনো দেশে এত লোড নেই।”

হাসপাতালের কর্মকর্তারা জানান, ১৯৮৬ সালে ৫০ শয্যা নিয়ে যাত্রা শুরু হয় জাতীয় ক্যান্সার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের। ১৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয় ২০০৯ সালে। একই অবকাঠামো রেখে ২০১৩ সালে শয্যা সংখ্যা ৩০০তে উন্নীত করা হয়।

শয্যা ও রোগীর সংখ্যা বাড়লেও জনবল বাড়েনি। বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসকের অনুমোদিত পদ ২২৬টি, কর্মরত আছেন ১৮৯ জন। খালি আছে ৩৮টি পদ।

রেডিওথেরাপির মেডিকেল টেকনোলজিস্ট পদের ২০টি অনুমোদিত পদের বিপরীতে কর্মরত ১১ জন। কর্মকর্তা-কর্মচারী সব মিলিয়ে এই হাসপাতালের জনবল ১ হাজার ১০ জন।

হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মোশাররফ হোসেন বলেন, এই চাপ সামাল দিতে দেশে ক্যান্সার চিকিৎসার বিকেন্দ্রিকরণ দরকার।

তিনি বলেন, “অন্তত প্রত্যেক বিভাগে একটি করে আধুনিক ক্যান্সার চিকিৎসার যন্ত্রপাতি সম্বলিত বিভাগ থাকলে রোগীর চাপ কমবে। রোগীরাও দ্রুত চিকিৎসা পাবে।”

এই প্রসঙ্গে অধ্যাপক মোয়াররফ জানান, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে প্রতি বিভাগে একটি করে ক্যান্সার চিকিৎসা কেন্দ্র তৈরির কাজ চলছে। এটা শেষ হলে রোগীদের দুর্ভোগ অনেকটা লাঘব হবে।

Exit mobile version