Site icon Health News

স্বাস্থ্যের ‘অস্বাস্থ্যকর’ ১১ খাত

কেনাকাটা, নিয়োগ, পদোন্নতি, বদলি, পদায়ন, চিকিৎসাসেবা, যন্ত্রপাতি ব্যবহার, ওষুধ সরবরাহসহ স্বাস্থ্যে ১১টি খাতে দুর্নীতি হয় বলে চিহ্নিত করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন।

এগুলো চিহ্নিতের পাশাপাশি দুর্নীতি প্রতিরোধে ২৫ দফা সুপারিশ সম্বলিত একটি প্রতিবেদন বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের হাতে তুলে দেওয়া হয় দুদকের পক্ষ থেকে।

দুদকের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত প্রাতিষ্ঠানিক দলের পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে তৈরি করা এই  প্রতিবেদন মন্ত্রীর হাতে তুলে দেন দুদক কমিশনার মোজাম্মেল হক খান।

প্রতিবেদনটি বিস্তারিত পর্যালোচনা করে মন্ত্রণালয় পদক্ষেপ নেবে বলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন।

দুদকের প্রতিবেদনে স্বাস্থ্য খাতের নিয়োগ–বদলি ও পদোন্নতিতে দুর্নীতি ও অনিয়মের কথা বলা হয়েছে। সংস্থাটি বলেছে, সরকারি হাসপাতালে নিয়োগ–বদলি, পদোন্নতি ও প্রশিক্ষণার্থী বাছাইয়ে কোনো নীতিমালা মানা হয় না, চলে অর্থের খেলা।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়ন্ত্রণে থাকা বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকের কর্মচারীরা একই কর্মস্থলে দীর্ঘদিন কর্মরত থাকার সুবাদে স্থানীয় দালালদের সমন্বয়ে সংঘবদ্ধ একটি চক্রে পরিণত হয় বলে দুদকের অনুসন্ধানে ধরা পড়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সাধারণ রোগী বা তাদের স্বজনদের অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে তাদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ নেয়। দ্রুত সেবা পাওয়ার আশায় রোগীরাও হাসপাতালের কর্মচারী বা দালালদের খপ্পরে পড়ে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তৃণমূল পর্যায়ের ক্রয় কমিটিতে নিরপেক্ষ ও দক্ষ কর্মকর্তার অভাবে অতি সহজেই সরকারি টাকা আত্মসাতের সুযোগ তৈরি হয় বলে দুদক মনে করছে।

তারা বলছে, ক্রয় কমিটির কার্যক্রমে সরকারের যথাযথ নজরদারি না থাকায় ওষুধ, চিকিৎসা সরঞ্জাম ও অন্যান্য পণ্য কেনাকাটায় দুর্নীতি হয়।

দুদক বলছে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানগুলোতে টাকা আত্মসাতের উদ্দেশ্যে অনেক অপ্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জাম কেনা হয়। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগসাজশ করে সরকারি টাকা ভাগ-ভাটোয়ারাও হয়।

যথাযথ নজরদারি না থাকায় হাসপাতালগুলোতে সরকার নির্ধারিত ওষুধ থাকার পরও রোগীদের দেওয়া হয় না বলে দুদকের দাবি।

দুদকের প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশের বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে একটি সংঘবদ্ধ দালাল চক্র সক্রিয় থাকে। এদের কাজ হল দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে আসা অসহায় গরিব রোগীদের উন্নত চিকিৎসার প্রলোভন দেখিয়ে বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া। বিনিময়ে ওই সব হাসপাতাল থেকে তারা একটি কমিশন পেয়ে থাকে।

দুদক বলছে, সমাজের একশ্রেণির প্রভাবশালী ব্যক্তি যথাযথ সরঞ্জাম না থাকা সত্ত্বেও সিভিল সার্জন কার্যালয়ের সহযোগিতায় ডায়াগনস্টিক সেন্টার স্থাপন করে থাকেন। তারা নানা উপায়ে সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকসহ কর্মচারীদের প্রভাবিত করে অপ্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য রোগী পাঠাতে বলেন। বিনিময়ে কমিশন দেন।

বেসরকারি মেডিকেল কলেজ স্থাপন করে অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে মেধা যাচাই না করে শিক্ষার্থী ভর্তির অভিযোগও তুলেছে দুদক।

কেনাকাটার ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে বিভিন্ন ধরনের অনিয়ম–দুর্নীতির মাধ্যমে নির্দিষ্ট কিছু প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেওয়া হয় বলেও প্রতিবেদনে বলা হয়।

এতে বলা হয়, দেশের কিছু কিছু ওষুধ কোম্পানি অথবা কোম্পানি নামধারী নকল প্রতিষ্ঠান নিম্নমানের ও নকল ওষুধ তৈরি করে। এসব কোম্পানি বিক্রয় প্রতিনিধিদের মাধ্যমে চিকিৎসকদের বিভিন্নভাবে প্রভাবিত করে তাদের উৎপাদিত নিম্নমানের ওষুধ লেখানোর ব্যবস্থা করে।

স্বাস্থ্য খাতে দুর্নীতি প্রতিরোধে ২৫টি সুপারিশ করেছে দুদক। এর মধ্যে রয়েছে প্রতিটি সরকারি হাসপাতালে উন্মুক্ত স্থানে সিটিজেন চার্টার প্রদর্শন, ওষুধের তালিকা প্রদর্শন, ক্রয় কমিটিতে বিশেষজ্ঞদের অন্তর্ভুক্ত করা, জনবল না থাকলে যন্ত্রপাতি না কেনা, দালাল ঠেকাতে কঠোর নজরদারি, অনুমোদনহীন ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধে নজরদারি চালানো, চিকিৎসকদের জন্য একটি সুনির্দিষ্ট বদলি নীতিমালা প্রণয়ন, ওষুধ কোম্পানির কাছ থেকে উপঢৌকন নিয়ে ব্যবস্থাপত্রে নিম্নমানের ওষুধ লেখা বন্ধ করতে ব্যবস্থা নেওয়া ইত্যাদি।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ভেঙে স্বাস্থ্যসেবা অধিদপ্তর ও স্বাস্থ্য–শিক্ষা অধিদপ্তর নামে পৃথক দুটি অধিদপ্তর করার সুপারিশও করেছে দুদক।

চিকিৎসকদের ইন্টার্নশিপ এক বছর থেকে বাড়িয়ে দুই বছর করা এবং বর্ধিত এক বছর উপজেলা পর্যায়ের হাসপাতালে থাকা বাধ্যতামূলক করতে বলেছে দুদক।

Exit mobile version