Site icon Health News

৩১ শয্যার জনবলে চলছে শ্রীমঙ্গলের ৫০ শয্যার হাসপাতাল

মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রোগীর ভিড় দিন দিন বাড়লে জনবলের অভাবে তারা কাঙ্ক্ষিত সেবা পাচ্ছেন না।

প্রায় ৬ বছর ধরে ৩১ শয্যার জনবলে চলছে ৫০ শয্যাবিশিষ্ট এই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স।

২০১২ সালের ১ ডিসেম্বর হাসপাতালটি ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করে নতুন ভবনের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের প্রায় ছয় বছর পেরিয়ে গেলেও ৫০ শয্যায় জনবল নিয়োগ দেওয়া হয়নি।

৩১ শয্যার জনবল দিয়ে ৫০ শয্যার হাসপাতাল চালাতে গিয়ে উপজেলার উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র ও ইউনিয়ন স্বাস্থ্য পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের চিকিৎসকদের নিয়ে আসা হচ্ছে এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে।

সার্জন না থাকায় শুধু প্রসূতিদের ছাড়া অন্য কোনো অস্ত্রোপচার করা যাচ্ছে না। ৩১ শয্যার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের পদগুলো জুনিয়র কনসালট্যান্ট (সার্জারি), জুনিয়র কনসালট্যান্ট (গাইনি), জুনিয়র কনসালট্যান্ট (মেডিসিন), জুনিয়র কনসালট্যান্ট (অ্যানেসথেশিয়া)ও ডেন্টাল সার্জন পদ পূরণ করে রাখা হয়েছে মেডিকেল অফিসার দিয়ে। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসকের থাকার কথা ২২ জন, সেখানে চিকিৎসক আছেন ৬ জন। যার ফলে কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসা সেবা পাচ্ছে না জটিল রোগীরা।

দীর্ঘদিন ধরে হাসপাতালটিতে টেকনিশিয়ানের অভাবে পড়ে আছে অত্যাধুনিক আলট্রাসনোগ্রাফি মেশিনটি। এক্সরে মেশিন নষ্ট ২০১১ সাল থেকে। ইসিজি মেশিন নষ্ট ২০১৬ সাল থেকে।

স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডা. রোকসানা পারভীন হেলথ নিউজকে বলেন, গত পাঁচ বছর ধরে হাসপাতালের জেনারেটর নষ্ট হয়েছে, নেই আইপিএস। ফলে গর্ভবতী নারীর সন্তান প্রসবের জন্য অস্ত্রোপচারের (সিজার) সময় যদি বিদ্যুৎ চলে যায় তখন খুবই সমস্যায় পড়তে হয়।

“অনেক সময় আমরা মোবাইল ফোনের লাইট জ্বালিয়েও অস্ত্রোপচার করেছি। তাছাড়া জেনারেল অ্যানেসথেশিয়া (জিএ মেশিন) নষ্ট থাকার কারণে প্রায়ই সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।”

ডা. শুভ্রাংশু শেখর দে হেলথ নিউজকে বলেন, “বিদ্যুৎ না থাকলে রোগীর হাতের শিরা না পেলে স্যালাইন পুশ করতে সমস্যা হয়। শিশুরা গরমে অতিষ্ঠ হয়ে পড়ে। আর মোমবাতির আলোয় প্রসূতি সেবা দেওয়া অনেক দুরূহ ব্যাপার।”

শ্রীমঙ্গল উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা জয়নাল আবেদীন টিটো হেলথ নিউজকে বলেন, “প্রতিদিন উপজেলার বিভিন্ন স্থান থেকে গড়ে সাড়ে ৩শ মানুষ চিকিৎসা নিতে আসে। আমাদের জনবল সঙ্কটের কারণে রোগীদের চিকিৎসা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। আমি এই জনবল ও চিকিৎসা সরঞ্জাম সংকটের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের একাধিকবার লিখিতভাবে জানিয়েছি।”

উপজেলার হাসপাতালটি ঘুরে দেখা যায়, মুমূর্ষু রোগীদের আনা-নেওয়ার জন্য পর্যাপ্ত ট্রলিও নেই । ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে আছে রোগীদের বিছানা, চাদর ও পর্দা। টিউবওয়েলের পানি আয়রনের আধিক্য থাকায় হাসপাতালের বাথরুমের মেঝে হয়ে  আছে লালচে।

৩১ শয্যার ৯ জন চিকিৎসক পদের মধ্যেও দুটি পদ শূন্য রয়েছে। ৭ জনের মধ্যে ডা. মিনাক্ষী দেবনাথ প্রেষণে জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ে আছেন। মাত্র তিনজন মেডিকেল অফিসার বহির্বিভাগ, আন্তঃবিভাগ ও জরুরি বিভাগে দায়িত্ব পালন করছেন।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. জয়নাল আবেদীন টিটো বলেন, “জনবল ও যন্ত্রপাতির চাহিদাপত্র আমরা কয়েক দফা অধিদপ্তরে পাঠিয়েছি। ৫০ শয্যার জনবল পেলে সঙ্কট কিছুটা কাটবে। আর বহির্বিভাগ, আন্তঃবিভাগ, জরুরি বিভাগসহ প্রতিটি বিভাগের জন্য আলাদা আলাদা ডাক্তার দিলে রোগীরা কাঙ্ক্ষিত সেবা পাবেন।”

Exit mobile version