চট্টগ্রামের ম্যাক্স হাসপাতালে তিন সপ্তাহ আগে শিশু রাফিদা খান রাইফার মৃত্যুর ঘটনায় চার চিকিৎসককে আসামি করে তার বাবা সাংবাদিক রুবেল খানের মামলাটি দুদিন পর নিয়েছে পুলিশ।
রুবেল খান গত বুধবার চট্টগ্রামের চকবাজার থানায় এজাহার দেওয়ার পরও মামলা হিসেবে তা নিচ্ছিল না পুলিশ। এর পরিপ্রেক্ষিতে অনশনে বসার ঘোষণাও দিয়েছিলেন তিনি।
এরপর শুক্রবার বিকালে এজাহারটি মামলা হিসেবে গ্রহণের কথা জানান চকবাজার থানার ওসি ওসি আবুল কালাম।
মামলায় শিশু বিশেষজ্ঞ বিধান রায় চৌধুরী, ম্যাক্স হাসপাতালের চিকিৎসক দেবাশীষ সেন গুপ্ত, শুভ্র দেব এবং হাসপাতালের পরিচালক ডা. লিয়াকত আলীকে আসামি করা হয়েছে।
তাদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি দণ্ডবিধির ৩০৪ এর খ (অবহেলার কারণে মৃত্যু), ২০১ (আলামত নষ্ট করা), ১০৯ (অপরাধে উৎসাহ দেওয়া) ও ৩৪ (পরস্পর যোগসাজশে অপরাধ সংঘটন) ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে বলে জানান ওসি।
দৈনিক সমকালের চট্টগ্রাম ব্যুরোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রুবেল খানের আড়াই বছর বয়সী মেয়ে রাইফা গলায় ব্যথা নিয়ে গত ২৮ জুন বিকালে ম্যাক্স হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর ২৯ জুন রাতে তার মৃত্যু হয়।
‘ভুল চিকিৎসায়’ রাইফার মৃত্যুর অভিযোগ তুলে সাংবাদিকরা বিক্ষোভ করলে পুলিশ ওই হাসপাতালে তখন কর্তব্যরত এক চিকিৎসক ও এক নার্সকে ধরে থানায় নিয়ে যায়। পরে বিএমএর চট্টগ্রাম শাখার সাধারণ সম্পাদক ডা. ফয়সাল ইকবাল থানায় গিয়ে তাদের ছাড়িয়ে আনেন।
এরপর চট্টগ্রামের চিকিৎসক ও সাংবাদিকরা মুখোমুখি অবস্থানে যায়; দুই পক্ষ পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি পালন করে।
এদিকে রাইফার মৃত্যুর ঘটনা তদন্তে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে একটি কমিটি করে দেওয়া হয়। পাশাপাশি চট্টগ্রামের সিভিল সার্জনের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি কমিটিও এ ঘটনার তদন্ত করে।
সিভিল সার্জনের নেতৃত্বাধীন কমিটি তাদের প্রতিবেদন কর্তব্যরত চিকিৎসক, নার্স ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দায়িত্বে অবহেলা এবং গাফিলতির প্রমাণ পাওয়ার কথা জানিয়ে তিন চিকিৎসকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করে।
এছাড়া স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের থেকে গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে ম্যাক্স হাসপাতালের বিভিন্ন ক্রুটির কথা তুলে ধরা হয়।
তদন্ত কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী ম্যাক্স হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ডা. দেবাশীষ সেন গুপ্ত ও ডা. শুভ্র দেবকে বরখাস্ত করে।
তবে বিধান রায় তাদের নিয়োগপ্রাপ্ত না হওয়ায় তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে না পারার কথা জানিয়ে ম্যাক্সের পক্ষ থেকে বলা হয়, এই চিকিৎসককে আর হাসপাতালে ডাকবেন না তারা।