Site icon Health News

অ্যান্টিবায়োটিকের অবাধ ব্যবহারে ঝুঁকিতে স্বাস্থ্য

সামান্য জ্বর কিংবা সর্দিকাশিতেও অ্যান্টিবায়োটিক নেন অনেকে, এর ঝুঁকির বিষয়টি না জেনেই। 

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগের এক জরিপে দেখা গেছে, জ্বর, সর্দি বা কাশিতে রাজশাহীতে ১ হাজার ৩০০ রোগীর মধ্যে ৩৪৭ জন অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করে থাকেন।

প্রয়োজন ছাড়া জীবন রক্ষাকারী এই ওষুধ ব্যবহার মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতির প্রভাব ফেলছে।  প্রতিটি ওষুধেই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে। এর মাঝে মাথা ব্যথার জন্য প্যারাসিটামল, পেপটিক আলসারের জন্য রেনিটিডিন, ওমিপ্রাজল বা অ্যান্টিবায়োটিক যাই হোক না কেন। অথচ সারাদেশে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন ছাড়াই অবাধে ওষুধ বিক্রি করা হয়ে থাকে।

চিকিৎসকরা বলছেন, মানুষ এবং সব প্রাণীর ক্ষেত্রে অতিমাত্রায় অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারে সংক্রমণগুলো অ্যান্টিবায়েটিক প্রতিরোধক হয়ে উঠে। এতে ভবিষ্যতে সাধারণ রোগও জটিল হয়ে উঠবে এবং চিকিৎসা হবে অনেক ব্যয়বহুল।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, খামারের পালিত প্রাণী কিংবা কৃষি কাজে ক্ষেত্রে অ্যান্টিবায়োটিকের অপব্যবহার উদ্বেগজনক হারে বেড়েছে। সব চেয়ে বেশি ব্যবহৃত হচ্ছে কৃষিকাজে। তাই বর্তমান সময়ে এই বিষয়ে সচেতন না হলে ভবিষ্যতে সাধারণ সংক্রামক রোগের চিকিৎসায় মানুষের জীবন হুমকির মুখে পড়বে এবং মৃত্যুর হার বেড়ে যাবে।

এ বিষয়ে দেশে খাদ্য নিরাপত্তা আইন থাকলেও তার প্রয়োগ সীমিত।

রাজশাহী মেডিকেল কলেজের মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ডা. মাহাবুবুর রহমান বাদশাহ বলেন, বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর নিয়ম হচ্ছে প্রেসক্রিশন ছাড়া অ্যান্টিবায়েটিক ওষুধ বিক্রি হয় না। বাংলাদেশেও বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন ছাড়া ওষুধ দেওয়া নিষিদ্ধ। কিন্তু’ অনেক সময় অসাধু কিছু ওষুধ ব্যবসায়ী প্রেসক্রিপশন ছাড়াই অ্যান্টিবায়েটিক দেয়। এই বিষয়ে সকলকে সচেতন হতে হবে।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগ ২০১৪ সালের মার্চ হতে এপ্রিল পর্যন্ত রাজশাহী বিভাগের ৮ জেলায় ১ হাজার ৩ শ’ রোগীর মধ্যে এক জরিপ করে। বিভাগের মাস্টার্সের ২৬ জন শিক্ষার্থী এই স্বাস্থ্য জরিপে অংশ নেয়।

জরিপে দেখা যায়, ১ হাজার ৩শ’রোগীর মাঝে ৩৪৭ জন অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করেন। এর মাঝে পুরুষ রয়েছে ৮৩.৫৭ শতাংশ এবং নারী রয়েছে ১৬.৪৩ শতাংশ।

এই অ্যান্টিবায়োটিকগুলো ঠাণ্ডা, কাশি, জ্বর, সংক্রমণ, দাঁতের ব্যথা, পেটের অসুখ, গলা ব্যথা, হাঁপানি রোগের জন্য ব্যবহার করা হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ৪০.৬৩ শতাংশ রোগী ২ বছর ধরে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করছেন, ৫ থেকে ৬ বছর ১৯.৮৮ শতাংশ, ৭ থেকে ৮ বছর ১৪.৪১ শতাংশ, ৯ থেকে ১০ বছর ধরে ১১.৮২ শতাংশ, রোগী এই অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করে থাকেন। যা ভবিষ্যতের জন্য উদ্বেগজনক বিষয় হয়ে দাড়িয়েছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডাব্লিউএইচও) বিশেষজ্ঞদের মতে, জ্বর, সর্দি, কাশি, ডায়রিয়াজনিত অসুস্থতায় অ্যান্টিবায়োটিকের কোনো কার্যকারিতা নেই। ডায়রিয়া স্বাভাবিক নিয়মে দুই বা তিনদিনের মধ্যে ভালো হয়ে যায়, যাতে পানি শূন্যতা না হয় সে কারণে শুধু খাবার স্যালাইন খেতে হয়। কিন্তু’ এ ধরনের কোনো রোগ দেখা দিলে রোগী সরাসরি চলে যান ফার্মেসি বা ওষুধ বিক্রেতার কাছে। আর ওষুধ বিক্রেতা অ্যান্টিবায়োটিক গছিয়ে দেন ক্রেতার হাতে।

এছাড়া অর্থলোভী কিছু চিকিৎসকও রোগ নির্ণয় ছাড়াই অ্যান্টিবায়োটিকসহ বিভিন্ন প্রকার ওষুধ দেন বলে অভিযোগ রয়েছে। বিশেষ করে পল্লী চিকিৎসক নামে পরিচিতরা নিজেকে জাহির করতে রোগীকে অতিমাত্রায় অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে থাকেন।

সম্প্রতি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারে সচেতনতা বৃদ্ধি’ বিষয়ক দু’দিনব্যাপী এক প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেখানে অনুষ্ঠানের সমন্বয়ক ও ফার্মেসি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. আজিজুর রহমান বলেন, “আ্যন্টিবায়োটিক জীবিত ব্যাকটেরিয়া তথা অণুজীবের বিপরীতে কাজ করে। যে সকল রোগ ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণে হয়, তা নিয়ন্ত্রণ ও নিরাময়ে আ্যন্টিবায়োটিক ব্যবহার করা হয়। কিন্তু’বর্তমানে মুরগি ও গরুর ক্ষেত্রে অতিমাত্রায় অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগ মাংসজাতীয় খাদ্য বিষে পরিণত হচ্ছে।”

Exit mobile version