Site icon Health News

উপজেলায় ক্যান্সার হাসপাতাল!

ক্যান্সারের চিকিৎসালয় যখন নগরেই খুঁজতে হয়, তখন সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলায় পাওয়া গেল একটি ক্যান্সার হাসপাতাল।

এই হাসপাতালে শুধু রোগীদের সেবাই দেওয়া হচ্ছে না; বাড়ি বাড়ি গিয়ে ক্যান্সারের রোগী শনাক্ত করার পাশাপাশি জনসচেতনামূলক কাজ করছেন হাসপাতালের কর্মীরা।

বিয়ানীবাজার উপজেলা সদরের কলেজ রোডে ৬৩ শতাংশ জমির উপর গড়ে তোলা হয়েছে এই হাসপাতাল। সদৃশ্য বহুতল এই হাসপাতাল ভবনটির পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় যে কারও নজর কাড়বে।

কেন এখানে বিশেষায়িত এই হাসপাতাল হল? আর বেসরকারি উদ্যোগে এই হাসপাতাল কারাই বা গড়ে তুলল?-খোঁজ নিতে গিয়ে জানা গেল, প্রবাসীরাই এই হাসপাতালটি গড়ে তুলেছেন।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তাদের অনুরোধে বিয়ানীবাজার জনকল্যাণ সমিতি, ইউকে ২০০৯ সালে এই ক্যান্সার হাসপাতালটি গড়ে তোলার প্রস্তুতি নেন। পূর্ণাঙ্গ একটি হাসপাতাল তৈরিতে অনেক খরচ বলে প্রবাসীরা তহবিল সংগ্রহ করতে থাকেন। অনেকের দানে তহবিল সমৃদ্ধ হলে ২০০৯ সালে হাসপাতালের নির্মাণ কাজের ভিত্তিস্থাপন করেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। তারপর ২০১৫ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি উদ্বোধন হয় হাসপাতালের।

বর্তমানে হাসপাতাল থেকে ক্যান্সারসহ অনেক ধরনের রোগের চিকিৎসা নিচ্ছেন দরিদ্র মানুষরা। উপজেলা পর্যায়ে বিয়ানীবাজারেই প্রথম ক্যান্সারের রোগীদের কেমোথেরাপি দেওয়া হচ্ছে। ফলে রোগীদের আর ঢাকা কিংবা বিদেশ ছুটতে হচ্ছে না।

হাসপাতালের পরিচালক রুকন উদ্দিন হেলথ নিউজকে বলেন, হাসপাতালে ক্যান্সারের চিকিৎসার পাশাপাশি দেওয়া হচ্ছে গাইনি, অর্থোপেডিকসহ আরও বিভিন্ন ধরনের সাধারণ চিকিৎসা। তাছাড়া হাসপাতালের বহিঃবিভাগে নাম মাত্র টাকা দিয়ে চিকিৎসকদের বিভিন্ন ধরনের পরামর্শ নিতে পারছেন রোগীরা।

তিনি বলেন, ক্যান্সারের রোগীদের প্রাধান্য দিয়ে তারা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের মাধ্যমে চিকিৎসা সেবা শুরু করেন এবং জটিল রোগীদের কেমোথেরাপি দেওয়ারও সকল ব্যবস্থা চালু করেন।

হাসপাতালটিতে ক্যান্সারের চিকিৎসা নেওয়া নাজিম উদ্দিন নামের এক রোগীর সঙ্গে কথা হয় হেলথ নিউজের। তিনি বলেন, বিনামূল্যে নামমাত্র টাকায় তিনি চিকিৎসা নিয়ে এখন মোটামুটি সুস্থ।

বিয়ানীবাজার উপজেলার আরেক মেয়ে সুভা, যার পিত্তথলিতে ধরা পড়ে পাথর। বিনা মূল্যে এই হাসপাতালের দরিদ্র তহবিল থেকে টাকা নিয়ে চিকিৎসা দেওয়া হয় তাকে। এখন সে সম্পূর্ণ সুস্থ।

এমনিভাবে প্রতিদিন শত শত মানুষ চিকিৎসা নিচ্ছেন বিয়ানীবাজার ক্যান্সার অ্যান্ড জেনারেল হাসপাতাল থেকে।

এলাকার নারী বা কিশোরীদের জরায়ু ক্যান্সারসহ বিভিন্ন রোগের বিষয়ে সচেতন করতে উপজেলার বিভিন্ন স্কুল-মাদ্রাসায় জনসচেতনামূলক কাজ চালাচ্ছেন হাসপাতালটির এক ঝাঁক কর্মী।

হাসপাতাল কর্মকর্তারা বলেন, এ পর্যন্ত এই কর্মসূচির আওতায় উপজেলার ৩৮টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রায় ৩৮ হাজার ছাত্রীকে এনেছে হাসপাতাল।

৯ মে বুধবার ইস্ট লন্ডনের একটি অভিজাত হোটেলে এক অনুষ্ঠানে হাসপাতালের অগ্রগতির প্রতিবেদনে বলা হয়, গত তিন বছরে ৭০৭ জন ক্যান্সার রোগী এবং ২২ হাজারেরও বেশি অন্যান্য রোগীকে চিকিৎসা সেবা দিয়েছে এই হাসপাতাল।

অনুষ্ঠানে হাসপাতাল পরিচালনার দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিরা বলেন, প্রতিবছর দরিদ্র ফান্ডের মাধ্যমেও বিপুল অসহায় রোগীদের সেবা দেওয়া হচ্ছে। ২০১৫ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত মোট ২২ হাজার ১৫৬ জন সাধারণ রোগীকে সেবা দেওয়া হয়েছে। দরিদ্র তহবিলের সহযোগিতা নিয়েছেন ১ হাজার ১৩০জন।

হাসপাতালের পরিচালক (বিপণন) ফরহাদ হোসেন টিপু জানান, বিভিন্ন পর্যায়ের অনুদানসহ হাসপাতালটির সর্বমোট আয় প্রায় পৌনে দুই মিলিয়ন পাউন্ড, যা হাসপাতালের ভবন নির্মাণ এবং সামগ্রিক আয়োজনে ব্যয় হচ্ছে। বর্তমানে মাসিক ব্যয় প্রায় ১০ লাখ টাকা।

হাসপাতালের চেয়ারম্যান ও কমিউনিটি নেতা শামসুদ্দিন খান বলেন, কয়েক বছরের মধ্যেই হাসপাতালটি নিজস্ব আয়ের উপর ভিত্তি করে চলতে পারবে।

হাসপাতালের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) সাব উদ্দিন বলেন, সেবা কার্যক্রম গতিশীল করতে আরও একটি ভবন তৈরি করা হবে। চক্ষু, ফিজিওথেরাপি, ডায়াবেটিস ও ওপিডি এই চারটি বিভাগও খোলা হবে হাসপাতালে।

“বিয়ানীবাজার ক্যান্সার অ্যান্ড জেনারেল হাসপাতাল শুধুই স্বপ্ন নয়, এটি এখন বাস্তবায়নের প্রতিচ্ছবি,” বললেন চ্যানেল এস’র প্রতিষ্ঠাতা মাহি ফেরদৌস জলিল।

Exit mobile version