Site icon Health News

শিশুর ওজন কম হলে অন্ধত্বের ঝুঁকি থাকে

আমার ছোট ছেলেটা সময়ের অনেক আগেই জন্ম নিয়েছে। যেখানে তার গর্ভে থাকার কথা ছিল ৪০ সপ্তাহ সেখানে সে গর্ভে ছিল মাত্র ৩১ সপ্তাহ ৪ দিন। যখন একটা শিশু সময়ের আগে জন্মায় তখন তার সব অঙ্গ সঠিকভাবে ম্যাচিউরড হয় না। এ রকমই একটা অঙ্গ হল চোখ, যা কিনা পরিপূর্ণভাবে তৈরি হতে সময় লাগে প্রায় ৩৬ সপ্তাহ।

তাহীম জন্মাবার পরই ওকে এনআইসিইউতে থাকতে হয়েছে ১৩ দিন। এরপর যখন ওকে ছাড়ল, আমরা তো ভীষণ খুশিতে ওকে বাড়ি নিয়ে আসলাম। দিনে দিনে ওর আরও উন্নতি হচ্ছিল। চুষে খাওয়া শিখে ফেলল। ওজন বাড়ছিল। শব্দ হলে এদিক ওদিক তাকাত। হাসি-কান্না মিলিয়ে একদম একটা সুস্থ বাচ্চা। আমরা কোনোভাবেই বুঝিনি ওর মায়াভরা আদুরে চোখদুটো আক্রান্ত হয়েছে রেটিনোপ্যাথি অব প্রিম্যাচুরিটি রোগে। যার জন্য ধীরে ধীরে ওর চোখের আলো নিভে যাচ্ছে।

এনআইসিউ থেকে ছাড়ার সময় ডিসচার্জ পেপারে লেখা ছিল যেন এক মাস পর রেটিনোপ্যাথি অব প্রিম্যাচুরিটি টেস্টটা করাই। তারা জোর দিয়ে বলেনি যে একমাসের মধ্যেই করাতে হবে, আর আমরাও গুরুত্ব দিইনি। ভাবছি সবই তো ঠিক আছে।

এ রোগটা এমনই, এ রোগের কোনো লক্ষণ নাই। ভয়াবহ এই রোগটা সাইলেন্ট কিলারের মতো চোখের দৃষ্টি কেড়ে নেয়। তবে আশার কথা হল এই রোগটা থেকে বাঁচতে পারি খুব সহজেই। শুধু দরকার হল সচেতনতা।

যাই হোক, তাহীমের ৩৯ দিন বয়সে আমরা টেস্টটা করাতে রংপুর যাই, জানতে পারলাম আমার সোনাবাচ্চাটা এই রোগের জোন টু স্টেজ টুতে রয়েছে, যা কি না এখনও চিকিৎসার পর্যায়ে রয়েছে। আমরা এমনিতেই ৯ দিন দেরি করে ফেলেছি, তাই ওখানকার ডাক্তার আমাকে বললেন যেন এক মুহূর্ত দেরি না করে ঢাকায় রওনা দিই। আমি একটুও কাঁদিনি। খুব শান্তভাবে ডাক্তারের কাছ থেকে বিস্তারিত জেনেছি আর ওই রাতেই ঢাকায় ফিরেছি। দ্রুত ওর চিকিৎসা শুরু করা হল। আল্লাহর অশেষ রহমতে ওর চোখ দুটো ভালোর পথে।

এখন প্রশ্ন হল কাদের হয় রেটিনোপ্যাথি অব প্রিম্যাচুরিটি।

৩৬ সপ্তাহের আগে জন্মানো অথবা ২ কেজির কম ওজনের বাচ্চারা এই রোগের ঝুঁকিতে থাকে। যেসব বাচ্চারা জন্মের পর তাদের হাই ফ্লো অক্সিজেন লাগে তারাও এর ঝুঁকিতে থাকে। তাই ৩৬ সপ্তাহের আগে জন্মানো কম ওজনের শিশুদের অবশ্যই একজন রেটিনা স্পেশালিস্টের কাছে নিয়ে ৩০ দিনের মধ্যেই পরীক্ষা করাতে হবে। আর ২৮ সপ্তাহের আগে জন্মানো বাচ্চাদের ২০ দিনের মধ্যে পরীক্ষা করাতে হবে।

সময় মতো ধরা পড়লে এই রোগের যথেষ্ট ভালো, চিকিৎসা বাংলাদেশে আছে। তাই শুধু দরকার সচেতনতা। দরকার গাইনি ও শিশু বিশেষজ্ঞদের একটু সহায়তা।

আমি যেমন জানতাম না, অনেক মা-ই ব্যাপারটা জানে না। সময় পেরিয়ে গেলে আফসোস ছাড়া আর কিচ্ছু করার থাকে না। অথচ সঠিক সময়ে ধরা পড়লে বাঁচতে পারে একটি শিশুর দৃষ্টি।

শুকরিয়া মহান আল্লাহর কাছে, ভালোবাসা তাদের জন্য, যারা এই বিপদের সময় আমার পাশে ছায়ার মতো ছিল, আছে। সবার কাছে আমার ছোট্ট তাহীমের জন্য দোয়া চাচ্ছি। আপনাদের দোয়ায় আমাদের রাখবেন।

তামান্না জেনিফার, ঢাকা।

Exit mobile version