Site icon Health News

জনবল সঙ্কটে খুমেক হাসপাতাল: চিঠি চালাচালিতেই ১০ বছর পার

সমস্যার অন্ত নেই খুলনা মেডিকেল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালে। ১০ বছর আগে হাসপাতালটি ২৫০ শয্যা থেকে ৫০০ শয্যায় উন্নীত করা হলেও হয়নি প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগ।

ফলে অর্ধেক জনবল দিয়েই চলছে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বৃহৎ এ হাসপাতালটি। খুলনা মেডিকেলে প্রতিদিন গড়ে ৭০০ থেকে ৭৫০ রোগী ভর্তি থাকে। আউটডোরে আসে সহস্রাধিক রোগী। এত রোগীকে সেবা দিতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন এখানকার চিকিৎসক-নার্সরা।

২০১৭ সালের জুনে অর্থ মন্ত্রণালয় এখানে চিকিৎসকসহ ৩৫২ জনবল নিয়োগের একটি প্রস্তাব প্রাথমিকভাবে অনুমোদন দেয়। কিন্তু নানা জটিলতায় থমকে আছে সেই প্রক্রিয়া।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ৫০০ শয্যার জনবল চেয়ে একাধিকবার মন্ত্রণালয়ে আবেদন করলেও কোনো সুরাহা হয়নি। বরং জনবল নিয়োগে চিঠি চালাচালিতে কেটে গেছে ১০ বছর।

ফলে খুলনাসহ আশপাশের জেলা থেকে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা গরিব রোগীরা কাঙিক্ষত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

খুলনার ডুমুরিয়া হতে আসা একজন রোগী আক্ষেপ করে বলেন, “এখানে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের খুব অভাব। রোগী মরুক বা বাঁচুক, কমবয়সী শিক্ষানবিশ ইন্টার্নরাই চিকিৎসা দেয়।

“কিছু জানতে গেলেই নার্স-ডাক্তারদের রূঢ় ব্যবহারের মুখোমুখি হতে হয়। প্রয়োজনীয় বেড না থাকায় বারান্দার মেঝেতে বিছানা পেতে প্রায় সময় চিকিৎসা নিতে হয়।”

৭৫টি শয্যা নিয়ে ১৯৮৯ সালে নগরীর বয়রা এলাকায় ‘খুলনা হাসপাতাল’ নামে যাত্রা শুরু হয়েছিল খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের। কয়েক ধাপে এর শয্যা সংখ্যা বাড়ানো হয়।

এই অঞ্চলের মানুষের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ২০০৮ সালে হাসপাতালটি ৫০০ শয্যায় উন্নীত করা হয়।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, ৫০০ শয্যার হাসপাতালে রোগীদের সুষ্ঠু চিকিৎসা সেবা দিতে চিকিৎসক, নার্স, কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ বিভিন্ন পর্যায়ে ১৬৫০ জনবল প্রয়োজন; কিন্তু এখানে আছে ৫৩২ জনবল।

প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা ও চিকিৎসক প্রয়োজন ৭১৩ জন, আছেন ৮১ জন।

দীর্ঘদিনেও হাসপাতালের পরিচালক, সহকারী পরিচালক, আবাসিক ফিজিসিয়ান ও সার্জনের পদ সৃষ্টি হয়নি। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের অধিকাংশ পদই শূন্য।

হাসপাতালের কর্মকর্তারা জানান, ২০০৮ সালে জনবল চেয়ে মন্ত্রণালয়ে প্রথম প্রস্তাব দেওয়া হয়। কিন্তু মন্ত্রণালয় থেকে তা ফিরিয়ে দিয়ে অর্গানোগ্রাম (সাংগঠনিক কাঠামো) অনুসারে পূর্ণাঙ্গ জনবলের প্রস্তাব পাঠানোর পরামর্শ দেওয়া হয়। সংশোধিত আকারে পরবর্তীতে ১২৬৮টি পদের প্রস্তাব দেওয়া হয়।

“কয়েকদফা চিঠি বিনিময়ের পর ২০১২ সালে বেতন কাঠামোর গড়মিল আছে জানিয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় তা বাতিল করে,” বলেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা।

খুমেক হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক এ টি এম মঞ্জুর মোর্শেদ বলেন, ২০১৭ সালের জুনে অর্থ মন্ত্রণালয় চিকিৎসকসহ ৩৫২ জনবলের একটি প্রস্তাব প্রাথমিকভাবে অনুমোদন দেয়। কিন্তু দীর্ঘদিনেও তা বাস্তবায়িত হয়নি।

আপাতত জরুরি অবস্থা মোকাবেলায় হাসপাতালে কিছু সংখ্যক চিকিৎসক নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।

তবে এই কিছু সংখ্যকে বৃহৎ এই হাসপাতালের সমস্যা সমাধানে অপ্রতুল মনে করছেন স্থানীয়রা।

Exit mobile version