দেশে জন্ম নিয়ন্ত্রণে সরকারি কার্যক্রমে ভাটা দেখছেন বিশেষজ্ঞরা; জন্ম নিয়ন্ত্রণ সামগ্রী বিতরণ কমে যাওয়ায় সরকারের লক্ষ্য অর্জনও ঝুঁকি ফেলেছে বলে উন্নয়ন সংস্থাগুলো মনে করছে।
এক সময় বাংলাদেশের পরিবার পরিকল্পনা কর্মসূচিতে সরকারের সাফল্য থাকলেও এখন পিছিয়ে পড়েছে মন্তব্য করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পপুলেশন সায়েন্সেস বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মঈনুল ইসলাম।
তিনি হেলথ নিউজকে বলেন, “জন্ম নিয়ন্ত্রণের হার আশানুরূপ হারে বাড়েনি। সামগ্রিক প্রজনন হার এক জায়গায় স্টেবল হয়ে আছে।”
তিনি বলেন, “সন্তান জন্মদানের সামগ্রিক হার ১৯৭৫ সালে যেখানে নারীপ্রতি ছিল ৬ দশমিক ৩, তা ১৯৯১ সালে ৪ দশমিক ৩ এবং তারপর ২০১১ সালে ২ দশমিক ৩-এ নেমে আসে। এই হার এখনও এরকমই আছে।
“কারণ সরকারের প্রচেষ্টা বাড়েনি। প্রান্তিক জনগোষ্ঠি ফ্রি জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রী না পেলে বা প্রচারণা না করলে এ হার কমবে না।”
বাল্যবিয়ে কমেনি মন্তব্য করে এই অধ্যাপক বলেন, “এখন ১৫-১৯ বছর বয়সে বিয়ে হচ্ছে। আর আমাদের এখন একটা টেনডেন্সি হল বিয়ের পর পর বাচ্চা নিয়ে নেয়া। এ কারণে প্রজনন হার বাড়ছে।”
অধ্যাপক মঈনুল মনে করেন, বাড়ি বাড়ি গিয়ে স্বাস্থ্যকর্মীরা জন্মনিয়ন্ত্রণের উপকারিতা বোঝানোর পাশাপাশি পিল ও কনডম পৌঁছে দেওয়ার যে প্রক্রিয়া ছিল, বর্তমানে সেই কার্যক্রমে ভাটা পড়েছে।
জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রীর সঙ্কটের কথা ইদানীং গণমাধ্যমে আসছে। বিভিন্ন জেলা থেকে পাওয়া খবর অনুযায়ী, অধিদপ্তরের মাঠকর্মীরা প্রয়োজনের সময় দম্পতিদের কনডম, আইইউডি দিতে পারছেন না।
এতে উদ্বেগ প্রকাশ করে জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিল (ইউএনএফপিএ), বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, বিশ্ব ব্যাংকসহ ছয় উন্নয়ন সহযোগী স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমকে সম্প্রতি চিঠি দিয়েছেন বলে প্রথম আলোয় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
জন্মনিয়ন্ত্রণে সরকারি কর্মসূচিতে প্রতিটি কনডম ১০ পয়সায় বিক্রি করেন মাঠকর্মীরা। কনডম ছাড়া অন্য সব জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রী বিনা মূল্যে দেওয়া হয়।
পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরে হিসাবে, গত বছর অক্টোবরে মাঠকর্মীরা ১ কোটি ১০ লাখ কনডম বিক্রি করেছিলেন। এ বছর জানুয়ারিতে বিক্রি কমে দাঁড়ায় ৯২ লাখে। ফেব্রুয়ারিতে বিক্রি হয় ৮০ লাখ। মার্চ ও এপ্রিলে কমে দাঁড়ায় যথাক্রমে ৭৫ ও ৬৬ লাখে।
নারীদের জন্য দীর্ঘস্থায়ী জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি আইইউডির সারা দেশে প্রতি মাসে চাহিদা ২০-২২ হাজার। সরবরাহ না থাকায় গত এপ্রিল মাসে মাত্র ১০ হাজার বিবাহিত নারী এ পদ্ধতি গ্রহণ করতে পেরেছেন।
বছর দুয়েক আগে ঢাকার কেন্দ্রীয় ভাণ্ডারে আগুন লাগলে বিপুল পরিমাণ খাওয়ার বড়ি, ইনজেকটেবল, ইমপ্লান্ট পুড়ে যায়। পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর এগুলো কেনার ওপর জোর দেয়। কিন্তু কনডম ও আইইউডি সংগ্রহে কমতি থাকে।
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রীকে গত মে দেওয়া চিঠিতে উন্নয়ন সহযোগীরা বলেছেন, সামগ্রীর মজুত নিঃশেষ হওয়ার পরিণতি পরিবার পরিকল্পনা কর্মসূচির জন্য খারাপ হবে।
তারা বলেছেন, দেশের চাহিদা পূরণ করার মতো কনডম উৎপাদন করার ক্ষমতা সরকারি প্রতিষ্ঠান ইডিসিএলের নেই। সরকার যেন চার কোটি কনডম আন্তর্জাতিক সরবরাহকারীদের কাছ থেকে কিনে নেয়। পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকার যেন বিমানপথে কিছু আইইউডি আনার উদ্যোগ নেয়।