Site icon Health News

তাপদাহ ও দূষণে হৃদরোগে আক্রান্তদের মৃত্যুর ঝুঁকি

তাপদাহ ও বাতাসে উচ্চমাত্রার দূষণের কারণে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর ঝুঁকি দ্বিগুণ হতে পারে বলে এক গবেষণায় বলা হয়েছে।

চীনের এক রাজ্যের ২ লাখের বেশি হৃদরোগীর উপর জরিপ চালিয়ে এই তথ্য প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশন (এএইচএ)।

এএইচএর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, উচ্চ তাপমাত্রা ও বাতাসে ভাসমান অতি সূক্ষ্ম ধূলিকণার (ফাইন পার্টিকুলেট ম্যাটার) দূষণের কারণে চীনের জিয়াংসু রাজ্যকে গবেষণার জন্য বেছে নেওয়া হয়েছে।

হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সঙ্গে ‘তীব্র গরম, তীব্র ঠাণ্ডা বা বাতাসে উচ্চমাত্রার দূষণের’ সম্পর্ক পাওয়া গেছে গবেষণায়। বাতাসে ধূলিকণার আকার ২.৫ মাইক্রোন বা তার চেয়ে কম হলে, সেটাকে অতি সূক্ষ্ম ধূলিকণা (ফাইন পার্টিকুলেট ম্যাটার) বলে।

সার্কুলেশন নামের গবেষণাপত্রে ২০১৫ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে চীনের জিয়াংসু রাজ্যের ২ লাখ ২ হাজার জন হৃদরোগে আক্রান্ত ব্যক্তির উপর জরিপের তথ্য বিশ্লেষণ করা হয়েছে।

গবেষণা অনুসারে, চারদিন ধরে চলমান তাপপ্রবাহের মধ্যে বাতাসে অতি ক্ষুদ্র ধূলিকণার কণার পরিমাণ প্রতি ঘনমিটারে ৩৭ দশমিক ৫ মাইক্রোগ্রামের বেশি থাকলে মৃত্যু ঝুঁকি দ্বিগুণ। নারী ও বয়স্কদের ক্ষেত্রে এই ঝুঁকি সর্বোচ্চ। 

এই জরিপের জ্যেষ্ঠ গবেষক ইউয়েই লিউ বলেন, ‘তাপদাহ ঘন ঘন ও দীর্ঘস্থায়ী এবং তীব্রতর হওয়ায় স্বাস্থ্যের উপর বিরূপ প্রভাব পড়ছে। এতে বাড়ছে উদ্বেগ।’

ইউয়েই লিউ চীনের গোয়াংঝোর সান ইয়াত সেন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব পাবলিক হেলথের মহামারী বিদ্যার সহযোগী অধ্যাপক।

তিনি আরো বলেন, ‘বাতাসে অতি ক্ষুদ্র দূষণ কণার উপস্থিতি স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে বড় পরিবেশগত সমস্যা। এই দূষণ ও উচ্চ তাপমাত্রা পরস্পর মিলে হৃৎপিণ্ডের স্বাস্থ্যের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে।’

উচ্চ তাপমাত্রা ও অতি ক্ষুদ্র ধূলিকণা মিলে কীভাবে হৃদরোগে মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়ায় বা আদৌও বাড়ায় কিনা সেবিষয়ে এখনো বিস্তর গবেষণার প্রয়োজন থাকলেও এটাকে বৈশ্বিক জনস্বাস্থ্যের জন্য চ্যালেঞ্জ হিসেবেই দেখছেন লিউ।

এই গবেষণার ফলাফলকে যথার্থ মনে করেন টেক্সাস হার্ট ইন্সটিটিউটের কার্ডিওলজিস্ট বা হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ড. আলেকজান্ডার পোস্টালিয়ান। তবে তিনি এই গবেষণার সঙ্গে জড়িত ছিলেন না।

ড. আলেকজান্ডার ফক্স নিউজ ডিজিটালকে বলেন, ‘তাপদাহ শুধু যে ক্লান্তি ও হিট স্ট্রোক বাড়ায় তা নয়, এর ফলে হৃদযন্ত্রের উপরও চাপ পড়ে। বাড়তি চাপের ফলে হৃদক্রিয়া বন্ধ বা হৃদক্রিয়া বিকল হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে।’

চরম আবহাওয়ায় সচেতনতা
হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা পেতে তীব্র তাপপ্রবাহ ও উচ্চমাত্রার দূষণের মধ্যে কম বের হওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন গবেষকরা। 

লিউ বলেন, ‘স্বাস্থ্যের ওপর বিরূপ প্রভাব এড়াতে কিছু কৌশল মেনে চলতে হবে যেমন- আবহাওয়ার পূর্বাভাস দেখে বের হওয়া, তীব্র গরমে বাইরে না যাওয়া, গরমে পাখা বা এসি ব্যবহার করা, আবহাওয়া অনুযায়ী পোশাক পরা, পর্যাপ্ত পানি পান করা এবং ঘরের ভেতরে তাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে পর্দা ব্যবহার করা।’

অতি ক্ষুদ্র ধূলিকণা থেকে রক্ষা পেতে ঘরে বায়ু পরিশোধক ব্যবহার করতে হবে, বাইরে মাস্ক পরতে হবে, ব্যস্ত মহাসড়ক থেকে দূরে হাঁটতে হবে, বাইরে তুলনামূলক কম শ্রমসাধ্য কাজ করতে হবে, বলেন তিনি।

যাদের আগে হৃদরোগ হয়েছে, তাদের বুকব্যথা বা শ্বাসকষ্টের দিকে খেয়াল রাখতে হবে।

Exit mobile version