Site icon Health News

থ্যালাসেমিয়ার বিস্তার রোধে নীতিমালা তৈরির নির্দেশ

বংশগত রক্তের রোগ থ্যালাসেমিয়ার বিস্তার বন্ধে নীতিমালা তৈরির জন্য একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট।

আগামী ৩০ দিনের মধ্যে সাত সদস্যের ওই বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করতে হবে। আর কমিটিকে খসড়া নীতিমালা তৈরি করে ছয় মাসের মধ্যে তা দাখিলের নির্দেশ দিয়েছে আদালত।

এক রিট আবেদনের শুনানি করে বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি মুহম্মদ মাহবুবুল ইসলামের হাইকোর্ট বেঞ্চ সোমবার এই আদেশ দেয়।

থ্যালাসেমিয়া রোগের বিস্তার বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে কেন নির্দেশনা দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুলও জারি করেছে হাইকোর্ট।

থ্যালাসেমিয়ার বিস্তার ঠেকাতে বিয়ের নিবন্ধন ফরমে বর ও কনের থ্যালাসেমিয়া রোগ সম্পর্কিত তথ্য কেন লিপিবদ্ধ করার নির্দেশ দেওয়া হবে না, তাও জানতে চাওয়া হয়েছে রুলে।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব, প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় সচিব, স্বাস্থ্য সচিব, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ সচিব, আইন মন্ত্রণালয়ের সচিব, ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সচিব, স্বাস্থ্যের মহাপরিচালকসহ মোট ৮ জনকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

এই রোগের বিস্তার রোধে সাধারণ জনগণ, ছাত্রছাত্রী, সরকারি কর্মচারী এবং অন্যান্য পেশাজীবীদের মাঝে প্রচার চালনোরও নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। 

থ্যালাসেমিয়া একটি বংশগত রক্তস্বল্পতাজনিত রোগ। এটি ছোঁয়াচে নয়, রক্তের ক্যানসারও নয়। তবে এর সহজ কোনো চিকিৎসা এখনও নেই।

মানবদেহে ২৩ জোড়া বা ৪৬টি ক্রোমোজোম থাকে। এ প্রতি জোড়ার অর্ধেক মায়ের আর বাকি অর্ধেক বাবার থেকে আসে।

১৬ নম্বর ক্রোমোজোমে থাকে আলফা জিন আর ১১ নম্বর ক্রোমোজোমে থাকে বিটা জিন। আলফা ও বিটা জিন দুটি আলফা ও বিটা গ্লোবিন নামের প্রোটিন তৈরি করে যা অনেক অ্যামাইনো অ্যাসিডের সমষ্টি।

জন্মগতভাবে কারও ১৬ বা ১১ নম্বর ক্রোমোজোমের আলফা অথবা বিটা জিন সঠিকভাবে অ্যামাইনো অ্যাসিড তৈরি করতে না পারলে আলফা বা বিটা গ্লোবিন প্রোটিন ত্রুটিপূর্ণ হয়।

আর আলফা বা বিটা গ্লোবিন চেইন ত্রুটিপূর্ণ থাকলে রক্তের লোহিত কণিকার হিমোগ্লোবিন ত্রুটিপূর্ণ হয়। ফলে লোহিত কণিকা দ্রুত ভেঙে যায় এবং রক্তস্বল্পতা দেখা দেয়।

জিন যেহেতু জোড়ায় জোড়ায় থাকে, একটি জিন ত্রুটিপূর্ণ হলে তাকে বলা হয় থ্যালাসেমিয়া বাহক বা মাইনর। আর দুটি জিনই ত্রুটিপূর্ণ হলে তাকে থ্যালাসেমিয়া মেজর বা রোগী বলা হয়।

থ্যালাসেমিয়ার বাহক হওয়া মানেই থ্যালাসেমিয়ার রোগী নয়।তবে বাবা ও মা দুজনই থ্যালাসেমিয়ার বাহক হলে সন্তানের থ্যালাসেমিয়ার রোগী হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়।

এ ধরনের রোগীকে রক্তস্বল্পতার জন্য নিয়মিত রক্ত দিতে হয়। ঘনঘন রক্ত নেওয়ায় ও পরিপাক নালি থেকে আয়রনের শোষণ ক্ষমতা বেড়ে যাওয়ায় শরীরে আয়রনের মাত্রা বেড়ে যায়। তাতে লিভার, হৃৎপিণ্ডসহ অন্যান্য অঙ্গের ক্ষতি হয়। সঠিক চিকিৎসা ও নিয়মিত রক্ত না নিলে থ্যালাসেমিয়া রোগী মারা যায়।

বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে থ্যালাসেমিয়া রোগের বিস্তার নিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদন যুক্ত করে হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ (এইচআরপিবি) গত ১৫ জুন হাইকোর্টে এই রিট আবেদন করে।

Exit mobile version