এত ব্যস্ততার মধ্যে ঘরে যাওয়ার সময় কই, তাই বাইরে রেস্তোরাঁয় খেয়ে নেওয়ার অভ্যাস গড়ে উঠছে অনেকেরেই: তাতে যে সমস্যা কিছু হয় না, এমন নয়; কিন্তু গবেষকরা এখন বলছেন, নতুন এক সমস্যার কথা।
তারা বলছেন, ঘন ঘন রেস্তোরাঁয় খেলে কেবল বেশি পরিমাণে অস্বাস্থ্যকর চিনি ও চর্বিই খাওয়া হয় না, ফ্যাটালেটস নামে ক্ষতিকর একটি উপাদান শরীরে ঢুকতে পারে।
পারফিউম, হেয়ার স্প্রে, শ্যাম্পু এবং খাবারের মোড়কে ব্যবহৃত প্লাস্টিকসহ নানা পণ্যে ক্ষতিকর এ রাসায়নিক উপাদান থাকে।
ফ্যাটালেটস ছেলে শিশুদের জন্মগত খুঁত ও আচরণগত সমস্যা এবং প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে স্থুলতার সমস্যা তৈরি করতে পারে। এমনকি এ উপাদানটি হরমোন লেভেলকে প্রভাবিত করে প্রজনন ক্ষমতা ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে বলে বিজ্ঞানীরা আশঙ্কা করছেন। এছাড়া শিশুদের অ্যাজমা,স্নায়ুবিক সমস্যা এমনকি ক্যান্সারের কারণও হতে পারে।
এনভায়রনমেন্ট ইনটারন্যাশনাল সাময়িকীতে প্রকাশিত গবেষণার ফলাফলে এই আশঙ্কার কথা বলা হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের সিয়াটল শিশু হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক শীলা সত্যনারায়ণ বলেন, “ফ্যাটালেটস এক ধরনের সিনথেটিক রাসায়নিক, যা শরীরের হরমোনের মাত্রাকে প্রভাবিত করে।”
১০ হাজার ২৫৩ জন ব্যক্তির উপর এ গবেষণা চালানো হয়। আগের ২৪ ঘণ্টায় তারা কী কী খেয়েছিলেন এবং কোথায় খেয়েছিলেন, তা জানতে চাওয়া হয় তাদের কাছে। একইসঙ্গে শরীরে এ রাসায়নিকের মাত্রা পরীক্ষায় তাদের প্রস্রাবের নমুনাও নেওয়া হয়।
অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে এক-তৃতীয়াংশেরও বেশি আগের দিন কমপক্ষে একবার বাইরে খেয়েছিল।
প্রাপ্ত তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, আগের দিন যারা রেস্তোরাঁ, ক্যাফেটেরিয়া ও ফাস্টফুডের দোকানে খেয়েছিল, তাদের শরীরে অন্যদের তুলনায় ফ্যাটালেটসের মাত্রা ৩৫ শতাংশ বেশি ছিল।
এনভায়রনমেন্টাল ও অকুপেশনাল হেলথের সহকারী অধ্যাপক এমি জোটা বলেন, “যারা বাইরে খেয়েছে, তাদের খাবার যে প্যাকেট দিয়ে মোড়ানো ছিল, সেটা থেকেই সম্ভবত এ উপাদান তাদের শরীরে প্রবেশ করে।”
বাইরে যারা খেয়েছে, তাদের মধ্যে বয়ঃসন্ধিকালীন ছেলে-মেয়েদেরমধ্যে ফ্যাটালেটসের উপস্থিতির হার ছিল বেশি, ৫৫ শতাংশ।
বিশেষ কিছু খাবার যেমন, চিজ বার্গার ও কিছু স্যান্ডউইচ যারা খেয়েছেন, তাদের ক্ষেত্রে হার বেশি ছিল বলে জানান তিনি।
শরীরে ফ্যাটালেটসের মাত্রা বৃদ্ধি সংক্রান্ত গবেষণা আগেও হয়েছে। তবে আগে কেবল ফাস্টফুডের দোকানগুলোর খাবার নিয়ে গবেষণা হয়েছিল। সাম্প্রতিক গবেষণায় অন্যান্য খাবারের দোকানগুলোকেও অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
সব দেখে এম জেটা বলছেন, সুস্থ থাকতে তাই ঘরে তৈরি খাবার খাওয়াই ভালো।