Site icon Health News

বাড়ছে এইডস রোগী

বিশ্বব্যাপি নানা বাস্তবতার মধ্য দিয়েই আজ পালিত হচ্ছে বিশ্ব এইডস দিবস। তথ্য প্রযুক্তির অবারিত আস্ফালনে প্রতিনিয়িত পাল্টে যাওয়া পৃথিবী জনস্বাস্থ্যে একইসাথে আশা ও হতাশার জায়গা তৈরি করছে। এর বাইরে নয়, বাংলাদেশও।

গত এক বছরে দেশে ঘাতক এইডস রোগীর সংখ্যা বেড়েছে এক হাজারের বেশি। এরমধ্যে পাশের দেশ মায়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ১০০ জন মানুষ রয়েছেন।

বাকি প্রায় ৯শ দেশের সাধারণ মানুষ। তবে বাস্তবতা এখানেই শেষ নয়, বরং এখনো প্রায় ৫৫ শতাংশ এইডস রোগীই রয়ে গেছে শনাক্তকরণের বাইরে। মাঠ পর্যায়ের কর্মিরাও বলছেন মাত্র ৪৫ শতাংশ রোগীকে শনাক্ত করা গেছে।

এবার দিবসটির প্রতিপাদ্য ‘এইডস নির্মূলে প্রয়োজন জনগণের অংশগ্রহণ’। দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্র থেকে জানা গেছে, এইচআইভি/এইডস নিয়ে দেশের মানুষের মধ্যে গত কয়েক বছরে সচেতনতা বাড়লেও আক্রান্ত শনাক্তের হার বাড়েনি। এইচআইভি পজিটিভ জেনেও অনেকেই হয়তো পারিবারিক ও সামাজিক নানা রকম ভয়ে বিষয়টি গোপন রেখেছেন।

এ ছাড়া অনেকে হয়তো পরীক্ষাও করায় না ধরা পড়ার ভয়ে। দেশে প্রথম এইডস রোগী শনাক্ত হয় ১৯৮৯ সালে। এর পর থেকে এ পর্যন্ত ছয় হাজার ৪৫৫ জন এইচআইভি সংক্রমিত ব্যক্তি শনাক্ত হয়েছে।

আর এ পর্যন্ত মারা গেছে এক হাজার ২০০ জনের বেশি; যদিও দেশে এইচআইভি সংক্রমিত মানুষের সংখ্যা ১৪ হাজারের বেশি হবে বলে জানানো হয়েছে বিশেষজ্ঞদের পর্যায় থেকে।

এইডস এর সংক্রমন বিভিন্ন মাধ্যমে হলেও অভিবাসনের মাধ্যমে সংক্রমণের ঘটনা নতুন করে উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আন্তর্জাতিক সংস্থা সেভ দ্য চিলড্রেনও অভিবাসনের মাধ্যমে বাংলাদেশে এইডস সংক্রমণের হার বাড়ছে বলে জানিয়েছে। সংস্থাটির কর্মকর্তারা বলছেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কাজের সন্ধানে যাওয়া ব্যক্তিরে মাধ্যমে বাংলাদেশে এইডস ছড়িয়ে পড়ছে। এ প্রেক্ষাপটে আন্তর্জাতিক ও সরকারি-বেসরকারি অর্থায়ন বাড়ানোর মাধ্যমে দেশে এইডস আক্রান্তের ঝুঁকি হ্রাসের পাশাপাশি চিকিৎসা নিশ্চিত করার পরামর্শ দিয়েছেন তারা।

দেশে জীবনাচারে অনিয়ন্ত্রিত প্রবণতা কিশোর ও তরুণ প্রজন্মের মধ্যে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। উচ্চবিত্ত থেকে নিম্নবিত্ত পর্যন্ত আক্রান্ত হয়ে পড়েছে তথাকথিত অতি আধুনিকতা, অবাধ তথ্য-প্রযুক্তির নেতিবাচক ব্যবহার ও নানা ধরনের মাদকসহ আরো কিছু অসুস্থ প্রবণতায়।

এর ধারাবাহিকতায় নতুন প্রজন্ম ঢুকে পড়ছে অনিয়ন্ত্রিত যৌনাচরণের মারাত্মক আসক্তিতে। দিনে দিনে এ পরিস্থিতি আরো ভয়ানক হয়ে উঠছে, যা দেশের এইডস-এইচআইভির ঝুঁকি আগের তুলনায় বহুমাত্রায় বাড়িয়ে তুলেছে বলে জানান বিশেষজ্ঞরা।

এইডস নিয়ে কাজ করা বিভিন্ন মাধ্যমের তথ্য অনুসারে গত বছরের ডিসেম্বর থেকে এখন পর্যন্ত দেশে নতুন এইচআইভি পজিটিভ এক হাজার ২০ জনকে শনাক্ত করা গেছে, যা ২০১৭ সালের ডিসেম্বর থেকে গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত শনাক্ত হয়েছিল ৮৬৯ জন। ওই সময়ে মারা গেছে ১৪৮ জন।

গবেষকরা বলছেন, দেশের ২৩ জেলা সবচেয়ে বেশি এই ঘাতক ব্যাধির ঝুঁকিতে রয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এইডস/এসটিডি কর্মসূচি থেকে সারাদেশে জরিপ করে ঢাকা, সিলেট, চট্টগ্রাম. দিনাজপুর, কুমিল্লা, যশোর, মৌলভীবাজার, কক্সবাজার, খুলনা, নারায়ণগঞ্জ, বাগেরহাট, সিরাজগঞ্জ, পাবনা, চাঁদপুর, সাতক্ষীরা, মুন্সীগঞ্জ, গাজীপুর, পটুয়াখালী, কিশোরগঞ্জ, বগুড়া, রাজশাহী, বরিশাল এবং ময়মনসিংহ- এই ২৩ জেলায় এ ঘাতক ব্যাধির অধিকমাত্রায় সংক্রমণ দেখা গেছে।

তবে রোহিঙ্গা আগমনের ঘটনা মড়ার উপর খাড়ার ঘা হয়ে এসেছে। মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মধ্যে এইচআইভি সংক্রমিত রোগীর সন্ধান মিলছে। ফলে নতুন করে উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে এই রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী । 

অন্যদিকে জাতিসংঘের এইডস বিষয়ক শাখা ইউএনএইডসের তথ্যমতে, সারাবিশ্বে তিন কোটি ছয় লাখ ৯০ হাজার মানুষ এইডসে আক্রান্ত। তবে ২০০০ সালের তুলনায় আক্রান্তের হার ৩৫ শতাংশ কমেছে।

Exit mobile version