Site icon Health News

স্বাস্থ্যখাত: বেতন আর নির্মাণেই ব্যয় হয়ে যায় বরাদ্দ

বরাদ্দের সম্ভাব্য অঙ্কটা জানা থাকলেও অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত আজ বৃহস্পতিবার ২০১৮-১৯ অর্থবছরের জন্য যে বাজেট ঘোষণা করতে যাচ্ছেন, তার দিকে তীক্ষ্ণ নজর রাখবেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী মো. নাসিম।

 গত (২০১৭-১৮) অর্থবছরে স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দ ছিল প্রায় ২০ হাজার ৫০০ কোটি টাকা, যা মোট বাজেটের ৪ দশমিক ৪ শতাংশ।

২০১৮-১৯ অর্থবছরে স্বাস্থ্য খাতে ২৩ হাজার চারশ কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব করা হবে। স্বাস্থ্য ও অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, স্বাস্থ্যখাতে গতবারের চেয়ে েএবার বরাদ্দ বাড়ছে আরও ২ হাজার ৯০০ কোটি টাকা।

তবে ২৩ হাজার ৪০০ কোটি টাকার সম্ভাব্য বাজেট নিয়ে সন্তুষ্ট নন স্বাস্থ্যমন্ত্রী মো. নাসিম ও প্রতিমন্ত্রী জাহিদ মালেক স্বপন। অন্তত গত এক সপ্তাহে গণমাধ্যমকর্মীদের বিভিন্ন প্রশ্নের যে জবাব দিয়েছেন সেখানে তাদের এমন মনোভাব স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী এ সময় বলেন, “এ খাতে বাজেটের বেশির ভাগই বেতনভাতা ও নতুন নতুন নির্মাণ কাজে চলে যাচ্ছে। সেখানে প্রকৃত অর্থে মানে জনগণের সেবা দেওয়ার লক্ষ্যে সম্পদ বা অর্থ থাকে কম।”

সচিবালয়ে এ নিয়ে কথা বলেন স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী জাহিদ মালেকও। তিনি বলেন, গতবার মোট বাজেটের শতকরা ৫ ভাগ ছিল স্বাস্থ্যখাতে। ৭ বা ৮ শতাংশ বরাদ্দ হলে স্বাস্থ্যখাতে আরো বেশি অর্জন সম্ভব হতো।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, “দেশে বছরে ৩০ লক্ষ ডেলিভারি হয়। এর মধ্যে শুধু মিডওয়াইফের অভাবে ৯ লাখ সিজার করতে হয়।“

মন্ত্রণালয় বলছে, এবারের বাজেটে তারা কমপক্ষে ২ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক, ২ হাজার পারিবারিক কল্যাণ কেন্দ্র, ২০ হাজার মিডওয়াইফ নিয়োগের অর্থায়ন চেয়েছে।

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সমীক্ষায় খাতভিত্তিক বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির ব্যয়ের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ১৯৯৮-৯৯ সালে স্বাস্থ্য, পুষ্টি, জনসংখ্যা ও পরিবার কল্যাণে ১ হাজার ২৫৬ কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছিল। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে যা বেড়ে দাঁড়ায় ৫ হাজার ৬৫৫ কোটি টাকায়। এর পরিমাণ এবার বাড়লেও অর্থের সুষ্ঠু ব্যবহার নিয়ে শঙ্কা থাকছেই।

বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ডা. রশীদ-ই-মাহবুব এক প্রশ্নের উত্তরে হেলথ নিউজকে বলেন, “বরাদ্দ কম শুধু তাই নয়, যতটুকু মিলছে সেই অর্থের সঠিক ব্যবহার না হওয়ায় বাধাগ্রস্ত হচ্ছে এই খাতের উন্নয়নে।”

তিনি বলেন, এই খাতে উন্নয়নের চেয়ে অনুন্নয়ন বাবদ বা বেতন, ভাতা, পেনশনে ব্যয় বেশি হয়।

সরকারের সমীক্ষাতেই স্বাস্থ্যখাতের কিছু চিত্র স্পষ্ট হয়ে উঠছে। স্বাস্থ্যসূচকের প্রবণতায় দেখা যায়, ২০১০ সালে ২ হাজার ৭৮৫ জনের একজন চিকিৎসকের কথা বলা হয়েছিল।

২০১১ থেকে ২০১৩ পর্যন্ত ২ হাজার ৮৬০ জন মানুষের জন্য ছিল মাত্র ১ জন চিকিৎসক।

চিকিৎসক নিয়োগের ফলে ২০১৪ সালে তা ২ হাজার ১২৯ এ নেমে আসে। ২০১৫ সালে আবার তা ২ হাজার ৬২৮ জনে দাঁড়ায়।

বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন অনুষদের ডিন অধ্যাপক এ বি এম আব্দুল্লাহ বলছেন, উন্নতির চেষ্টা হচ্ছে। বাজেটে অর্থের সংস্থানও বাড়ছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা কতটা কাজে আসছে তার মূল্যায়ন জরুরি।

“দেশে ভালো ডাক্তার তৈরি করতে না পারলে স্বাস্থ্যখাতের সব টাকা সব প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়ে যেতে পারে,” বলেন তিনি।

Exit mobile version