রূপ বদলাচ্ছে ডেঙ্গু, গবেষণার তাগিদ

নিউজ ডেস্ক, হেলথ নিউজ | ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ২২:০৯ | আপডেটেড ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০৪:০৯

mosha1

দেড় যুগ আগে বাংলাদেশে যখন প্রথম আলোচনায় আসে ডেঙ্গু, তখন থেকে এখন রোগের ধরনে অনেক অমিল পাচ্ছেন চিকিৎসকরা।

তারা বলছেন, দ্রুত ধরন পাল্টে জটিল হয়ে উঠছে ডেঙ্গু। এ পরিস্থিতিতে জরুরি হয়ে পড়েছে ডেঙ্গু নিয়ে দেশে উচ্চপর্যায়ের একটি নীতিমালা তৈরি এবং বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করা।

গত পাঁচ বছরের মধ্যে এবার ডেঙ্গুর প্রকোপ সবচেয়ে বেশি বলে সরকারের পরিসংখ্যানই বলছে। গত অগাস্টে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা এক হাজার ৬৬৬ জনে পৌঁছায়। সেপ্টেম্বরের প্রথম ৯ দিনে ছাড়িয়ে গেছে সেই হারও। চলতি মৌসুমে এ পর্যন্ত ১১ জনের মৃত্যু ঘটেছে ডেঙ্গুতে।

গত ৩-৭ সেপ্টেম্বর ভারতের দিল্লিতে অনুষ্ঠিত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার আঞ্চলিক সভায় ডেঙ্গু নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে এ রোগ প্রতিরোধে নতুন কর্মপরিকল্পনা গ্রহণের তাগিদ দেওয়া হয়।

দৈনিক কালের কণ্ঠের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এবারের ডেঙ্গুর প্রকোপ দেখে দেশের বিশেষজ্ঞরা এই রোগ নিয়ে নতুন করে গবেষণা ও ভাবনা-চিন্তার তাগিদ দিয়েছেন।

বিশেষ করে ৪ ধরনের (সেরোটাইপের) ডেঙ্গুর (ডিইএনভি-১, ডিইএনভি-২, ডিইএনভি-৩ ও ডিইএনভি-৪) মধ্যে ঠিক কোন ধরনের ডেঙ্গুর প্রকোপ বাংলাদেশে বেশি কিংবা এবার বিশেষ কোনো ধরনের ডেঙ্গুর প্রকোপ বেশি ঝুঁকিপূর্ণ কি না, তা খতিয়ে দেখা জরুরি বলে মত দিয়েছেন ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব প্রিভিলেন্স অ্যান্ড সোস্যাল মেডিসিনের (নিপসম) অধ্যাপক ডা. বে-নজীর আহম্মেদ।

তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, এখন জ্বর হলেই যেমন মানুষ প্রথমেই ডেঙ্গু বা চিকুনগুনিয়ার কথা স্মরণ করে ডাক্তারের কাছে আসছে, তেমনি ডাক্তাররাও শুধু রোগীর ডেঙ্গু বা চিকুনগুনিয়া কি না, সেটা শনাক্ত করেই ছেড়ে দেন বা চিকিৎসা করেন। কিন্তু যার ডেঙ্গু শনাক্ত হচ্ছে সে ঠিক কোন টাইপের ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে, সেটা ঠিকভাবে শনাক্ত করা হচ্ছে না।

“কিন্তু এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যদিও এ ক্ষেত্রে সমস্যা হচ্ছে ওই টাইপিং খুব একটা সহজ বা সব প্রতিষ্ঠানে হয় না। এর পরীক্ষা কিছুটা আলাদা ও জটিল। তবু এখন সময় এসেছে শুধু ডেঙ্গুর পরীক্ষা করেই দায় না সেরে টাইপিংও করা দরকার। নয়তো সঠিক চিকিৎসা থেকে রোগী বঞ্চিত হওয়ার ঝুঁকি থেকে যায়।”

ডা. বে-নজীর আহম্মেদ বলেন, ‘আমাদের কাছে সাধারণ যে তথ্য আছে, তাতে একবার কারও কোনো এক ধরনের ডেঙ্গু হয়ে গেলে ওই ব্যক্তির শরীরে সেই ধরনটি আর হয় না। কিন্তু এবার দেখছি সেই তথ্য বা ধারণাও ভুল হচ্ছে। আবার দেখছি, যে উপসর্গ সাধারণত দ্বিতীয় বা তৃতীয় পর্যায়ের ডেঙ্গুতে হওয়ার কথা, তা প্রথমবারেই হচ্ছে। ফলে সব কিছু কিছুটা তালগোলে অবস্থা। এমন পরিস্থিতিতে জরুরি হয়ে পড়েছে ডেঙ্গু নিয়ে দেশে উচ্চপর্যায়ের একটি গাইডলাইন তৈরি এবং বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করা।”

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ) অধ্যাপক ডা. সানিয়া তাহমিনা কালের কণ্ঠকে বলেন, “এবার আসলেই পরিস্থিতি কিছুটা গোলমেলে মনে হচ্ছে। আবার যারা মারা যাচ্ছে, তারা বেশির ভাগই প্রাইভেট হাসপাতালের রোগী। এ ছাড়া অনেককেই দেখা যাচ্ছে, দু-তিন দিনের জ্বরের মাথায় অনেকটাই আচমকা খারাপ অবস্থায় চলে যাচ্ছে। তাই এসব নিয়ে আজকালের মধ্যেই নতুন করে বিশেষজ্ঞ পর্যায়ের বৈঠক ডাকা হবে করণীয় ঠিক করতে।”

নীতিমালার বিষয়ে এ কর্মকর্তা বলেন, “এ বছর আমরা শুরু থেকেই খুবই সতর্ক ছিলাম। সেই আলোকে পুরনো গাইডলাইনকে নতুন করে আবার প্রকাশ করা হয়েছে, যা সব জায়গায় পাঠানোও হয়েছে। সবাই এখন ডেঙ্গুর বিষয়ে সচেতন। তবে টাইপিং পাল্টে গেলেও সেটা দ্রুত ধরা সহজ নয়। আর সব টাইপের ডেঙ্গুর উপসর্গ একই ধরনের। তাই নিশ্চিতভাবে তা শনাক্ত করা অনেকটা সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। ততক্ষণ রোগীকে চিকিৎসা না দিয়ে বসে থাকা যায় না। তাতে বরং রোগীর ক্ষতি হতে পারে। এ ক্ষেত্রে আগে উপসর্গ অনুযায়ী দ্রুত জরুরি চিকিৎসা দিয়ে পরে হয়তো টাইপিং পরীক্ষার ব্যবস্থা করা যেতে পারে অধিকতর উন্নত চিকিৎসা সুবিধার জন্য।”

সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান আইইডিসিআরের প্রতিবেদনে ২০১৪ সালের জানুয়ারি থেকে গত বছরের ৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। সেখানে দেখা যায়, এবারই দেশে সর্বোচ্চ সংখ্যক ডেঙ্গু রোগী। যা গত পাঁচ বছরের যে কোনো বছর এবং যে কোনো মাসের চেয়েও সর্বোচ্চ, যা পর্যায়ক্রমে বেড়েছে। এর আগে সর্বোচ্চ সংখ্যক ডেঙ্গু রোগী ছিল গত বছরের সেপ্টেম্বরে এক হাজার ৫৪৪ জন, এবার অগাস্টেই ওই সংখ্যা ছাড়িয়ে উঠে যায় এক হাজার ৬৬৬ জনে। আর সেপ্টেম্বরের প্রথম ৯ দিনে ওই হার টপকে আক্রান্তের সংখ্যা তালিকাভুক্ত হয়েছে ৭৬৬ জন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কন্ট্রোল রুমের ডিউটি অফিসার ডা. কামরুল হাসান কালের কণ্ঠকে রোববার বিকাল পর্যন্ত হিসাব দিয়ে বলেন, “চলতি মৌসুমে এ পর্যন্ত মোট ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে তিন হাজার ৭১২ জনে। মারা গেছে ১১ জন। এর মধ্যে গতকাল বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি ছিল ৩১০ জন।”

কালের কণ্ঠের প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে ২০০০ সালে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব তীব্র হয়, তখন থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত দেশের ২৩ হাজার ৪২৬ জন এ রোগে আক্রান্ত হয়েছে। মৃত্যু ঘটেছে ২৩৩ জনের। এর মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ পরিস্থিতি ছিল ২০০৪ সালে। ওই বছর সরকারি হিসাবেই শুধু ঢাকায় আক্রান্ত হয় তিন হাজার ৮৭৫ জন এবং মৃত্যু হয় ১৩ জনের। এ ছাড়া ২০০৮ সালে এক হাজার ১৮১ জন এবং ২০০৯ সালে সারা দেশে ৭০০ জনের বেশি আক্রান্ত হয়।

বিশেষজ্ঞরা জানান, মূলত ডেঙ্গুর উৎস বন্ধ হচ্ছে না বলেই এমনটা হচ্ছে। উৎস বন্ধ না করতে পারলে ডেঙ্গুর ঝুঁকি থেকেই যাবে। কয়েক বছর ধরেই ডেঙ্গু একটু কমছে তো আবার বাড়ছে।

অধ্যাপক ডা. বে-নজীর আহম্মেদ কালের কণ্ঠকে বলেন, মশা অন্তত ৯টি রোগের মারাত্মক বাহক ও প্রাণঘাতী হয়ে উঠেছে। এ ক্ষেত্রে প্রধানত এডিস এজিপ্টি, কিউলেক্স ও অ্যানোফিলিস মশার মাধ্যমেই ছড়ায় এসব রোগ। আর এ দেশে সাধারণত জুন-জুলাই থেকে শুরু করে অক্টোবর-নভেম্বর পর্যন্ত ডেঙ্গুর বিস্তার থাকে। জুলাই-আগস্ট-সেপ্টেম্বর মাসে পরিস্থিতি বেশি খারাপ থাকে। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ব্যক্তির যদি স্বাস্থ্যের দ্রুত অবনতি ঘটতে থাকে এবং হেমোরেজিক ফিভার বা রক্তক্ষরণকারী পর্যায়ে চলে যায়, তখন দ্রুত ফ্রেশফ্রোজেন প্লাজমা কিংবা কনসেনট্রেটেড প্লেটলেট অথবা প্রয়োজনে পূর্ণ রক্ত-পরিসঞ্চালনের মাধ্যমে চিকিৎসার প্রয়োজন হয়, যা হাসপাতালে ছাড়া সম্ভব নয়।

বিষয়: ,

নোটিশ: স্বাস্থ্য বিষয়ক এসব সংবাদ ও তথ্য দেওয়ার সাধারণ উদ্দেশ্য পাঠকদের জানানো এবং সচেতন করা। এটা চিকিৎসকের পরামর্শের বিকল্প নয়। সুনির্দিষ্ট কোনো সমস্যার জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়াই শ্রেয়।

দিল্লির বায়ুদূষণ ঠেকাতে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর পরিকল্পনা

ডেঙ্গুতে আরও ১২ জনের মৃত্যু

বিষাক্ত ধোঁয়াশায় আচ্ছন্ন দিল্লি

খালেদা জিয়া স্বাস্থ্যসেবা থেকে মানুষকে বঞ্চিত করেছিল: প্রধানমন্ত্রী

ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা তিন লাখ ছুঁই ছুঁই

টেকনাফে আইসিডিডিআর,বি হাসপাতালের ভিত্তিপ্রস্তর

ডেঙ্গু: হাসপাতালে ভর্তি ১৫১২ রোগী

গ্যাসের ওষুধের এত বিক্রি! কেন?

ডেঙ্গু: ২৪ ঘণ্টায় ১৭ জনের মৃত্যু

রক্তদাতার সন্ধান মিলবে অ্যাপে

স্বাস্থ্যখাতে চীনা বিনিয়োগের আহ্বান স্বাস্থ্যমন্ত্রীর

ডেঙ্গু: ১৮৯৫ রোগী হাসপাতালে ভর্তি

দেশে ডেঙ্গু টিকার সফল পরীক্ষা

অসংক্রামক রোগের চিকিৎসা একটি চ্যালেঞ্জ: স্বাস্থ্যমন্ত্রী

ডেঙ্গু: হাসপাতালে ভর্তি আরও ১৭৯৪ জন

ডিম-আলুর দামে পতন

ডেঙ্গুতে প্রাণহানি ১৪০০ ছাড়াল

সুস্থ আছে প্রথম টেস্ট টিউব শিশু ‘দানিয়া’

স্বাস্থ্য-শিক্ষায় মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের অন্তর্ভুক্তির সুপারিশ

ডেঙ্গুতে হাসপাতালে ভর্তি ১৬৩৮, মৃত্যু ১৩ জনের

স্বাস্থ্য সেবায় যাত্রা শুরু

আঙুর কেন খাবেন?

ছোট এ রসালো ফলটিতে আছে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, খনিজ ও ভিটামিন। আঙুরে রয়েছে ভিটামিন কে, সি, বি১, বি৬ এবং খনিজ উপাদান ম্যাংগানিজ ও পটাশিয়াম। আঙুর কোষ্ঠকাঠিন্য, ডায়াবেটিস, অ্যাজমা ও হৃদরোগের মতো রোগ প্রতিরোধে বিশেষ ভূমিকা রাখে।

সব টিপস...

চকলেটে ব্রণ হয়?

এই পরীক্ষাটি চালাতে গবেষকরা একদল ব্যক্তিকে এক মাস ধরে ক্যান্ডি বার খাওয়ায় যাতে চকলেটের পরিমাণ ছিল সাধারণ একটা চকলেটের চেয়ে ১০ গুণ বেশি। আরেক দলকে খাওয়ানো হয় নকল চকলেট বার। চকলেট খাওয়ানোর আগের ও পরের অবস্থা পরীক্ষা করে কোনো পার্থক্য তারা খুঁজে পাননি। ব্রণের ওপর চকলেট বা এতে থাকা চর্বির কোনো প্রভাব রয়েছে বলেও মনে হয়নি তাদের।

আরও পড়ুন...

      ভিটামিন ডির ঘাটতি পূরণে কী করণীয়?

300-250
promo3