অনির্ণেয় রোগ নির্ণয় করেন যে চিকিৎসক

নিজস্ব প্রতিবেদক, হেলথ নিউজ | ২১ আগস্ট ২০২৩, ২২:০৮ | আপডেটেড ২১ আগস্ট ২০২৩, ১০:০৮

maxresdefault

আনডায়াগনজড ইলনেস। মানে অনির্ণেয় রোগ। একজন রোগী দীর্ঘ সময় ধরে নানা উপসর্গ নিয়ে কষ্ট পাচ্ছেন। কিন্তু কিছুতেই তার রোগ ধরা যাচ্ছে না। এমন অনেক নানা ধরণের অজ্ঞাত রোগ খুঁজে বের করে চিকিৎসা দিয়ে সুস্থ করে তোলেন ডা. শক্তিরঞ্জন পাল।

তিনি বিভিন্ন জটিল অজ্ঞাত রোগ, মাল্টি-সিস্টেম ডিজিজ, ডায়াবেটিস, মেটাবলিক সিনড্রোম, অ্যান্টি-এজিং এবং পুরুষের যৌন স্বাস্থ্য নিরাময়ের ক্ষেত্রে তার দক্ষতার জন্য সুপরিচিত।  

চার দশকের বেশি সময় ধরে থাইল্যান্ডে চিকিৎসক হিসেবে কাজ করছেন ডা. শক্তিরঞ্জন পাল। তার মধ্যে ২০ বছরের বেশি সময় ধরে ব্যাংকক হাসপাতালে কর্মরত আছেন এই বাংলাদেশি চিকিৎসক।

 সম্প্রতি অল্প সময়ের জন্য এসেছিলেন ঢাকায়। এ সময় সাংবাদিকেদের সাথে কথা বলেন তিনি।

ডা. শক্তি রঞ্জন পাল বলেন, কারও একটা অসুখ আছে, কিন্তু রোগটা কি এখনো তা নির্ণয় করা হয় নাই বা করা যায় নাই এমন অসুখকেই সাধারণত অজ্ঞাত বা অজানা রোগ বলা হয়ে থাকে।

“সাধারণত এক মাসের কম সময়ে আমরা কখনও অজ্ঞাত রোগ বলি না। যখন দেখা যায়, দুই মাস, ছয় মাস, এক/দুই বছর হয়ে গেছে কিছুই ধরা পড়ছে না, তখন এটাকে আমরা অজ্ঞাত রোগ বলি।”

তিনি আরও বলেন, বিষয়টা একটু জটিল। যেমন, কোনো একটা লোকের জ্বর হয়েছে, তার জ্বর একমাস দুই মাস কিংবা টানা ছয়মাস ধরেই চলছে। এর মধ্যে সেই জ্বরের রোগী চিকিৎসকের কাছে যাচ্ছে, টাইফয়েড, ম্যালেরিয়া, ক্যান্সার এমন অনেক পরীক্ষা নিরীক্ষাও করেছে বিভিন্ন ল্যাবে। কিন্তু রোগটা কি কেউ শনাক্ত করতে পারছে না। চিকিৎসক তাকে কিছু ঔষধ দিচ্ছেন খেতে, হয়তো শেষে কোন রোগ ধরতে না পেরে রোগীকে এন্টিবায়োটিক দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু রোগীর জ্বর আর কমছে না। দেখা যাচ্ছে, কিছুদিন হয়তো জ্বর কমছে আবার জ্বর ফিরে আসছে। তখন এই জ্বরটাকে আমরা বলবো অজ্ঞাত জ্বর। অর্থাৎ জ্বরের উৎস কি তা জানা যাচ্ছেনা। সুতরাং এটা একটা অজ্ঞাত রোগ। এই রোগীকে যদি আমরা ভালোভাবে পরীক্ষা নিরীক্ষা করি, তাহলে একটা সময় হয়তো রোগটা ধরা পড়বে। তখনো তার চিকিৎসাও করা যাবে।  

নিজের একজন রোগীর কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ১৫ বছরের ঢাকার একজন ছেলের জ্বর হচ্ছে, সাথে রক্তশূন্যতাও দেখা দিয়েছে। পাশাপাশি সে শুকিয়ে যাচ্ছে। তখন এই ছেলেটিকে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে অনেক ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর কিছুদিন তাকে প্যারাসিটামল এবং এন্টিবায়োটিক খাওয়ানো হলো। তাতেও সে সুস্থ হচ্ছে না, কিছুদিন পর পর আবার জ্বর চলে আসছে। তার স্বাস্থ্য দিন দিন খারাপ হচ্ছে, সে এতটাই দুর্বল হয়ে পড়ে যে পড়াশোনাও বন্ধ করে দিতে হয়।

একজন ডাক্তারের পরামর্শক্রমে ঢাকার একটি ভালো হাসপাতালে তার বোন ম্যারো পরীক্ষা করা হয়। এরপর তারা বাচ্চাটির লিউকেমিয়া (ব্লাড ক্যান্সার) হয়েছে বলে সনাক্ত করেন এবং কেমোথেরাপি দিতে বলেন। এতে বাচ্চাটির বাবা-মা ভয় পেয়ে যান। তখন বাচ্চাটির বাবা-মা আমার সাথে যোগাযোগ করলে আমি তাদেরকে সম্ভব হলে ব্যাংককের হাসপাতালে আসতে বলি। আমি বাচ্চাটির বাবা মাকে বলি, যে স্লাইড দিয়ে পরীক্ষা করে ক্যান্সার শনাক্ত হয়েছিল, সেই স্লাইডটিও সঙ্গে নিয়ে আসতে। তারা স্লাইডটি নিয়ে যায়।

তখন আমি সেই স্লাইডটি আমাদের ল্যাবে পরীক্ষার জন্য পাঠাই। পরীক্ষার পর তারা আমাকে বলে যে না, এখানে ক্যান্সারের কোনো কিছু নেই। এর আগে কোনো ডায়াগনোসিস ছিল না, পরে যেটা করল সেটাও প্রশ্নের সম্মুখীন। তখন আমি আমাদের হাসপাতালে একজন রক্ত রোগ বিশেষজ্ঞকে বললাম, আবার একটি ফ্রেশ বোন ম্যারো করতে। ফ্রেশ বোন ম্যারো করার পরেও তারা বলল কোনও ক্যান্সার নেই। তবে তার বোন ম্যারোতে আমরা অস্বাভাবিক কিছু একটা দেখতে পাচ্ছি, যেটা আমাদের এই ল্যাবে পরীক্ষা করা সম্ভব নয়। এটা হয়তো কোনো ট্রপিকাল ডিজিস যেটা আমরা জানি না। ওইখানে ট্রপিক্যাল মেডিসিনের একটি হাসপাতাল রয়েছে, সেখানে স্যাম্পল পাঠানো হলো। তখন ট্রপিক্যাল মেডিসিন হাসপাতাল পরীক্ষা নিরীক্ষা করে দেখলো বাচ্চাটির কালা জ্বর। তখন আমি সেই হাসপাতালকে বলি তোমরা কি এটা নিশ্চিত, কারণ কালা জ্বর বাংলাদেশ থেকে অনেক আগেই বিদায় নিয়েছে। তারা বললো, নিশ্চিত। কালা জ্বরের ওষুধ থাইল্যান্ডের নেই, এমনকি বাংলাদেশেও নেই। তখন আমরা ভারত থেকে ওষুধ এনে আমাদের হাসপাতালেই ছেলেটির চিকিৎসা করি। ছয় সপ্তাহ চিকিৎসার পর আস্তে আস্তে তার জ্বর চলে যায় এবং সে সুস্থ হয়ে ওঠে। এই ছেলেটা ৭/৮ মাস ধরে একটি অজ্ঞাত জ্বরে কষ্ট পাচ্ছিল। পরিশেষে একটা রোগ ধরা পড়ল যেটা চিকিৎসা যোগ্য।

 এরকম অজ্ঞাত রোগ আরও অনেক রয়েছে। শুধু জ্বর নয়, হাড়ের অসুখ, কিংবা প্যানিক এটাকের রোগীকে হার্ট অ্যাটাক শনাক্ত করে হার্ট এটাকের ওষুধ খাওয়ানোর উদাহরণও আছে। আমি সব সময় বলি, আজকে যেটা অজ্ঞাত রোগ হিসেবে রয়েছে, কাল সেটা হয়তো চিহ্নিত করা যাবে এবং চিকিৎসাও সম্ভব।  

অজ্ঞাত রোগের চিকিৎসা বিষয়ে এই বিশেষজ্ঞ বলেন, অজ্ঞাত রোগের চিকিৎসায় দুইটি বিষয় অনেক গুরুত্বপূর্ণ, প্রথমত রোগিটিকে চিকিৎসকদের অনেক গভীর এবং আন্তরিকতার সাথে, অনেক সময় নিয়ে ধৈর্য ধরে দেখতে হবে। একবারে না হলে দ্বিতীয় তৃতীয় কিংবা চতুর্থবার চেষ্টা করতে হবে। দ্বিতীয়ত সর্বোচ্চ পর্যায়ের ডায়াগনোসিস করা। অনেক ক্ষেত্রে আবার পরীক্ষা-নিরীক্ষার মূল্য অনেক বেশি হলে রোগীর আর্থিক অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে সেটা করাতে চায় না।

অনেকেই হৃদরোগ ডায়াবেটিস, ক্যান্সার কিংবা অন্যান্য রোগ বিষয়ে কথা বলে, কিন্তু অজ্ঞাত রোগ বিষয়ে কেউ কোনও কথা বলতে চায় না, লিখতে চায় না। মনে হয় অজ্ঞাত রোগ বিষয়ে কারো কোন কিছু করার নাই। তাই আমি এই বিষয়টা নিয়ে কাজ করি। আমি বলি এই ধরনের রোগে কেউ আক্রান্ত হলে কখনোই আশা ছেড়ে দেবেন না। যেহেতু এত কিছুর পরেও রোগী মারা যায়নি, বড় কোন রোগও ধরা পড়েনি, তাই বলা যায় অজ্ঞাত রোগ অনেক বেশি বিপজ্জনক নয়, এই আশাটা জীবিত রাখতে হবে।

প্রথম এবং দ্বিতীয়বার যেহেতু কোনো কিছু শনাক্ত হয়নি, তাই এই বিষয়ে যারা বিশেষজ্ঞ তাদের কাছে যেতে হবে। আমার কাছে আসতে হবে বিষয়টি এমন নয়, ভারত বা সিঙ্গাপুরেও যেতে পারেন। তবে এক্ষেত্রে কোন জায়গায় টেকনোলজি উন্নত সেই বিষয়টাও মাথায় রাখতে হবে। কারণ বর্তমান সময়ের উন্নত মানের চিকিৎসা প্রযুক্তি (টেকনোলজি) ছাড়া শুধু ডাক্তারের পক্ষে কিছু করা সম্ভব নয়।

যদি ভালো চিকিৎসক এবং  উন্নত মানের টেকনোলজি থাকে তাহলে হয়তো একটা সময় রোগের সমাধান আসবে। শতভাগ না হলেও দেখা যায় ৯০ থেকে ৯৫ শতাংশ ক্ষেত্রে সমাধান হয়ে যায়। আমার ডাটা অনুযায়ী আমি দেখেছি ৯০ শতাংশ ক্ষেত্রে ভালো সমাধান পাওয়া যায়। ৫ শতাংশ লোকের আংশিক সমাধান হয়, আর বাকি ৫ শতাংশ ফেইলর হয়। ৯৫ সফলতা অনেক ভালো বলা যায়। ৫ শতাংশ ফেইলর এটা যে কোন অপারেশনের ক্ষেত্রেও হয়।

বিষয়:

নোটিশ: স্বাস্থ্য বিষয়ক এসব সংবাদ ও তথ্য দেওয়ার সাধারণ উদ্দেশ্য পাঠকদের জানানো এবং সচেতন করা। এটা চিকিৎসকের পরামর্শের বিকল্প নয়। সুনির্দিষ্ট কোনো সমস্যার জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়াই শ্রেয়।

দিল্লির বায়ুদূষণ ঠেকাতে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর পরিকল্পনা

ডেঙ্গুতে আরও ১২ জনের মৃত্যু

বিষাক্ত ধোঁয়াশায় আচ্ছন্ন দিল্লি

খালেদা জিয়া স্বাস্থ্যসেবা থেকে মানুষকে বঞ্চিত করেছিল: প্রধানমন্ত্রী

ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা তিন লাখ ছুঁই ছুঁই

টেকনাফে আইসিডিডিআর,বি হাসপাতালের ভিত্তিপ্রস্তর

ডেঙ্গু: হাসপাতালে ভর্তি ১৫১২ রোগী

গ্যাসের ওষুধের এত বিক্রি! কেন?

ডেঙ্গু: ২৪ ঘণ্টায় ১৭ জনের মৃত্যু

রক্তদাতার সন্ধান মিলবে অ্যাপে

স্বাস্থ্যখাতে চীনা বিনিয়োগের আহ্বান স্বাস্থ্যমন্ত্রীর

ডেঙ্গু: ১৮৯৫ রোগী হাসপাতালে ভর্তি

দেশে ডেঙ্গু টিকার সফল পরীক্ষা

অসংক্রামক রোগের চিকিৎসা একটি চ্যালেঞ্জ: স্বাস্থ্যমন্ত্রী

ডেঙ্গু: হাসপাতালে ভর্তি আরও ১৭৯৪ জন

ডিম-আলুর দামে পতন

ডেঙ্গুতে প্রাণহানি ১৪০০ ছাড়াল

সুস্থ আছে প্রথম টেস্ট টিউব শিশু ‘দানিয়া’

স্বাস্থ্য-শিক্ষায় মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের অন্তর্ভুক্তির সুপারিশ

ডেঙ্গুতে হাসপাতালে ভর্তি ১৬৩৮, মৃত্যু ১৩ জনের

স্বাস্থ্য সেবায় যাত্রা শুরু

আঙুর কেন খাবেন?

ছোট এ রসালো ফলটিতে আছে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, খনিজ ও ভিটামিন। আঙুরে রয়েছে ভিটামিন কে, সি, বি১, বি৬ এবং খনিজ উপাদান ম্যাংগানিজ ও পটাশিয়াম। আঙুর কোষ্ঠকাঠিন্য, ডায়াবেটিস, অ্যাজমা ও হৃদরোগের মতো রোগ প্রতিরোধে বিশেষ ভূমিকা রাখে।

সব টিপস...

চকলেটে ব্রণ হয়?

এই পরীক্ষাটি চালাতে গবেষকরা একদল ব্যক্তিকে এক মাস ধরে ক্যান্ডি বার খাওয়ায় যাতে চকলেটের পরিমাণ ছিল সাধারণ একটা চকলেটের চেয়ে ১০ গুণ বেশি। আরেক দলকে খাওয়ানো হয় নকল চকলেট বার। চকলেট খাওয়ানোর আগের ও পরের অবস্থা পরীক্ষা করে কোনো পার্থক্য তারা খুঁজে পাননি। ব্রণের ওপর চকলেট বা এতে থাকা চর্বির কোনো প্রভাব রয়েছে বলেও মনে হয়নি তাদের।

আরও পড়ুন...

      ভিটামিন ডির ঘাটতি পূরণে কী করণীয়?

300-250
promo3